শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সংঘর্ষে পণ্ড বিএনপির সমাবেশ

মিরপুর রণক্ষেত্র, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ, লাঠি নিয়ে রাস্তায় অবস্থান সরকারি দলের, শতাধিক আহতের দাবি বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংঘর্ষে পণ্ড বিএনপির সমাবেশ

রাজধানীর পল্লবীতে গতকাল বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর চড়াও হন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশ সদস্যরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে কাছাকাছি দূরত্বে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে লাঠিচার্জ, রাবার বুলেটসহ টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ায় প- হয়ে যায় সমাবেশটি। সমাবেশের প্যান্ডেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ সমাবেশস্থলে লাঠি হাতে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। সংঘর্ষে বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আর পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপির তিন-চারজন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলায় বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসছিলেন। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আর তখন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তাদের পক্ষ নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তারা আমাদের ওপর লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে।’

অন্যদিকে সমাবেশস্থলে থাকা আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন দাবি করেন, এখানে তাদের নিয়মিত কর্মসূচি ছিল। সামনে জাতীয় ও জেলা পরিষদ নির্বাচন আছে। এ ছাড়া আজ এসএসসি পরীক্ষা ছিল। সবাই তারা নিজেদের কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাদের কয়েকজন লোক পেয়ে বিএনপির লোকজন মারধর করেছে। এ খবর শুনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এখানে এসেছে। বিএনপির লোকেরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাকভর্তি ইটপাটকেল নিয়ে এসেছে। তারা যদি কর্মসূচি করবে তাহলে তো বাইরে থেকে লোক আসার কথা না। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের নেতা-কর্মীদের মারধর করেছে, জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছে। তাই আমরাও প্রতিরোধ করতে এসেছি।’ 

জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, নেতা-কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল রাজধানীর মিরপুর জোনে এ সমাবেশ করার কথা ছিল ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির। সমাবেশস্থলে আমানউল্লাহ আমান অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এক হয়ে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে তাদের শতাধিক কর্মী আহত ও অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। যতই বাধা-বিপত্তি আসুক, রাজধানীতে মাসব্যাপী ডাকা কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান তিনি। তবে পুলিশের মিরপুর জোনের ডিসি জানিয়েছেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর আগ বাড়িয়ে হামলা করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মিরপুরে গতকাল বিএনপির কর্মসূচি শুরুর আগেই সমাবেশস্থলের আশপাশ এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল বের করেন। একপর্যায়ে সমাবেশে আসতে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শেষ হওয়ার পরও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা হাতে ওই এলাকায় অবস্থান নিয়ে মিছিল করতে থাকেন। এরপর তারা বিএনপির সমাবেশস্থলে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান নেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক বলেন, পুলিশের মিরপুর জোনের উপকমিশনার (ডিসি) তিনটি জায়গা পরিবর্তন করে বিএনপিকে মিরপুর-৬ নম্বর কাঁচাবাজারের পাশে মুকুল ফৌজ মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। ঘটনার শুরুতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলাকারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে থাকে। এ ঘটনায় আমাদের অনেক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। কেউ কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির সমাবেশের জন্য অস্থায়ী মঞ্চ তৈরিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রথমে কথাকাটাকাটি হয়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। এ ঘটনায় মিরপুর-৬ নম্বর সড়কে ঘণ্টাব্যাপী যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশ সদস্যদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা করেছে বলে দাবি করেছেন ডিএমপির মিরপুর বিভাগের ডিসি মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা। তিনি বলেন, ‘মিরপুর-৬ নম্বর সড়কে বিএনপির একটি সভা ছিল। পাশ দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শোকসভায় যাওয়ার সময় বিএনপির লোকজন তাদের ওপর হামলা করে। আওয়ামী লীগের লোকজনের ওপর হামলা করার পরও আমরা সরিয়ে দিই। কিন্তু বিএনপির কর্মীরা নেতাদের উসকানিতে আমাদের ওপর হামলা করে। হামলার জন্য কারা উসকানি দিয়েছে, কারা হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে তা তদন্ত করার পর জানা যাবে। আমরা তাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার সুযোগ করে দিয়েছি। অথচ তারা আমাদের ওপর হামলা করল।’

অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগ তাদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশ সেখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা জসীম বলেন, ‘তারা তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছে। তারা কী বক্তব্য দিয়েছে আমরা জানি না। আপনারা দেখছেন, আমাদের ওপর তারা (বিএনপি) অতর্কিত হামলা করেছে।’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিএনপির ওপর হামলা চালিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মিরপুর জোনের ডিসির সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তিনি আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে অনুমতি দিয়েছেন। যখন আমাদের নেতা-কর্মীরা সমাবেশে আসছিল, তখনই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।

 বিএনপি প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যখন পিছু হটে, ঠিক সেই সময় পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পক্ষ নেয়। পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেদিক থেকে আসছে, সেদিকেই টিয়ার শেল নিক্ষেপ করেছে। এতে আমাদের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আমরা ডিসিকে আগেই বলেছি, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব।’

দলের কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যে কর্মসূচি শুরু করেছি এটা চলবে। আজকেও বিভিন্ন জায়গায় কর্মসূচি চলছে। যে কোনো বাধা আমরা প্রতিহত করব ইনশা আল্লাহ।’ বিএনপি নেতা-কর্মীরা আগে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেছে এমন অভিযোগের বিষয়ে আমানউল্লাহ আমান বলেন, বিএনপি এখানে কোনো হামলা করেনি। পরিকল্পিতভাবে পুলিশের সহযোগিতায় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির ওপর হামলা চালিয়েছে।

সর্বশেষ খবর