শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নিখোঁজ তিনজনের পরিবারে আহাজারি চলছেই

আউলিয়ার ঘাট ও বদেশ্বরী মন্দির সম্পর্কে যা জানা যায়

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

নিখোঁজ তিনজনের পরিবারে আহাজারি চলছেই

পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। নিখোঁজ তিনজনের পরিবারে আহাজারি চলছেই। উৎকণ্ঠা থেকে এখনো বের হতে পারেননি স্বজনরা। নিখোঁজ তিনজন হলেন- দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর হাতিডুবা গ্রামের মদন চন্দ্রের ছেলে ভূপেন ওরফে পানিয়া (৪০), বোদা উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের খগেন্দ্রনাথের ছেলে সুরেন (৬৫) ও সদর উপজেলার ঘাটিয়ারপাড়া গ্রামের ধীরেন্দ্রনাথের      মেয়ে জয়া রানী (৪)। তাদের লাশ উদ্ধারে এখনো করতোয়ায় অভিযান চলছে। মহালয়ার পূজায় অংশ নিতে বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন তারা। ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ে ওই নৌকাডুবিতে নিহতের মধ্যে একজন বাদে সবাই সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পঞ্চগড়ের সহকারী উপপরিচালক শেখ মাহাবুবুল আলম বলেন, উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

আউলিয়ার ঘাট ও বদেশ্বরী মন্দির : বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনপাড়া ইউনিয়নের ঐতিহাসিক বদেশ্বরী মন্দির আউলিয়ার ঘাটে করতোয়ার ওপারে অবস্থিত। মহালয়ার দিন পূজার্চনা করতে সেখানেই যাচ্ছিলেন হিন্দুধর্মের হাজারো মানুষ। পূজার আনন্দ আর আবেগে ৫০ জনের নৌকায় চড়েছিলেন শতাধিক। পুরনো নৌকাটি ভার সইতে না পেরে মাঝনদীতে উল্টে যায়। ডুবে যান সব পুণ্যার্থী।

আউলিয়ার ঘাট ও বদেশ্বরী মন্দির- এ দুই তীর্থস্থানে প্রতি বছর শত শত পর্যটক আসেন। বদেশ্বরী মন্দিরে বছরের নানা সময় চলে পূজা। আউলিয়ার ঘাটে হয় ইসালে সওয়াব। আউলিয়ার ঘাট থেকে বদেশ্বরী মন্দিরের দূরত্ব ১ কিলোমিটার।

কথিত আছে, বারো আউলিয়ার একজন এসেছিলেন আউলিয়ার ঘাটে। এক দরবেশের মাজারও ছিল। ওই আউলিয়া বা দরবেশের নাম কেউই জানাতে পারেননি। এখন সেই মাজারও নেই। নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলেও মাজার নিয়ে রয়েছে নানা মিথ। করতোয়া-ঘোড়ামাড়া নদীর মিলনস্থলে বর্ষায় তীব্র স্রোত থাকে। দ্বীপের মতো একটি জায়গায় ছিল ওই দরবেশের মাজার। বয়স্করা বলছেন দীর্ঘকাল আগে নদী ভাঙন শুরু হলে ওই আউলিয়া এখানে আসেন। তিনি জাফরান কালি দিয়ে খোয়াজ খিজিরকে চিঠি লেখেন। চিঠিটা চলে যায় নদীর গভীরে।

কথিত আছে, বদেশ্বরী মন্দিরের কারুকার্যময় ভবন নির্মাণ করা হয় পাল আমলে। সেই ভবন এখনো রয়েছে। হিন্দুধর্মের স্কন্দপুরাণমতে, একটি যজ্ঞানুষ্ঠান করেছিলেন রাজা দশরথ। তাঁর জামাই ছিলেন ভোলানাথ শিব। শিবকে জামাই হিসেবে মানতে পারেননি রাজা দশরথ। কারণ শিব সর্বদাই ছিলেন উদাসীন, নেশাগ্রস্ত ও ধ্যানগ্রস্ত। ভোলানাথ শিব দেবী দুর্গার (পার্বতী/মহামায়া) স্বামী। তাঁকে নিমন্ত্রণ করা হয়নি এমন কথা শুনে ক্ষোভে যজ্ঞেই আত্মাহুতি দেন দেবী দুর্গা বা পার্বতী। সহধর্মিণীর মৃতুযন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে উন্মাদ হয়ে যান শিব। সহধর্মিণীর লাশ কাঁধে নিয়ে উন্মাদের মতো ঘুরতে থাকেন। একসময় প্রলয়ের সৃষ্টি করেন। স্বর্গের রাজা বিষ্ণুদেব তা সহ্য করতে পারেননি। তিনি স্বর্গ থেকে একটি দুদর্শনচক্র নিক্ষেপ করেন। চক্রের স্পর্শে শবদেহটি ৫১ খন্ডে বিভক্ত হয়। এ খন্ডগুলো নানা স্থানে পড়ে। বাংলাদেশে পড়ে দুটি খন্ড। একটি চট্টগামের সীতাকুন্ড এবং অন্যটি পঞ্চগড়ের বদেশ্বরীতে। মহামায়ার খন্ডিত অংশ যেখানে পড়েছে তাকে পীঠ বলা হয়। বদেশ্বরী মহাপীঠ এরই একটি। তাই বদেশ্বরী মন্দির হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান।

সর্বশেষ খবর