বিএনপি গণমিছিলের নামে যেন কোনো ধরনের নৈরাজ্য করতে না পারে- সেজন্য আজ রাজধানীতে পাড়া-মহল্লায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ ছাড়াও ঢাকার তিনটি প্রবেশপথসহ নয়টি স্পটে ‘সমাবেশ’ করবেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এতে কেন্দ্রীয় নেতাসহ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বক্তৃতা করবেন। ভোর থেকেই সন্ত্রাস-নাশকতা ঠেকাতে অবস্থান নেবেন নেতা-কর্মীরা। কেন্দ্র থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ বিএনপির গণমিছিলে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী হবে জানতে চাইলে দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি বরাবরই বলে আসছি, রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সমাবেশের নামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করার কোনো অধিকার নেই। অতীতের মতো বিএনপি গণমিছিলের নামে যাতে গণ্ডগোল করতে না পারে- সেজন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও পৃথক কিছু জায়গায় আমরা শান্তি সমাবেশ করব।’
বিএনপির গণমিছিলের দিনে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ-পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হয়ে যাচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি কোথায় কোথায় গণমিছিল করবে, আমরা নিশ্চিত হইনি। আর যদি বিএনপি গণমিছিলের নামে সহিংসতা করে, তাহলে আমরা কি দাঁড়িয়ে থাকব? গত ১০ ডিসেম্বরের মতো আমরা সারা দেশে সতর্ক পাহারায় থাকব। ওইদিন যেমন ছিলাম একই অবস্থানে থাকব।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ আজ সকাল থেকেই পাড়া মহল্লায় সতর্ক অবস্থান নেবে। পাশাপাশি রাজধানীর তিনটি প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, গাবতলীতে বিশেষ পাহারায় থাকবেন নেতা-কর্মীরা। নেতা-কর্মীদের করণীয় কী হবে- তা গতকাল এক বিশেষ বর্ধিত সভায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও মিরপুর-১ নম্বর ও মিরপুর-১০ নম্বর এবং ভাটারা ইউলুপের সামনে সমাবেশ করবেন নেতা-কর্মীরা। ঢাকা দক্ষিণে দুটি স্পটে সমাবেশ করা হবে। সেগুলো হলো ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং যাত্রাবাড়ী। এই স্পটগুলোতে সকাল থেকেই দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ১০ ডিসেম্বরের মতো সতর্ক পাহারায় থাকবেন।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণমানুষের দল। আমরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছি। সরকারের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল হিসেবেও জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের আছে। অতীতে আমরা বিএনপির কর্মকাণ্ড দেখেছি, সহিংসতা- নৈরাজ্য ছাড়া শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচি তারা পালন করে না। সে কারণে আমরা সতর্ক। যেখানেই সন্ত্রাস-সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। জনগণের নিরাপত্তা দিতে দলীয় নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই মাঠে থাকবে।’
জানা গেছে, আজকের দিনটি শুক্রবার হওয়ায় বায়তুল মোকাররমসহ মসজিদগুলোর আশপাশেও সতর্ক পাহারায় থাকবেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মুসল্লি সেজে অতীতে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সন্ত্রাস করেছে। আগুন দিয়ে পবিত্র কোনআন শরিফ পুড়িয়েছে। সে কারণে সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি রাজধানীর নয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে বড় জনসমাগমের প্রস্তুতি রয়েছে। এসব স্পটে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শ্যামলী স্কয়ারের সমাবেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকবেন। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ীতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি এবং বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমসহ কেন্দ্রীয় ও নগর নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন- বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ব্যর্থ হয়ে এখন গণমিছিলের নামে আবারও সরকার পতনের নতুন ছক কষছে। এই অবস্থায় বিএনপির কর্মসূচিকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগ রাজধানীর সাতটি স্পটে সমাবেশ করবে। আমরা প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারায় থাকব।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ বলেন, আন্দোলন বা কর্মসূচির নামে যাতে কেউ কোনো ধরনের নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেজন্য প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে আমাদের নেতা-কর্মীরা সতর্ক অবস্থান নিয়ে মাঠে থাকবে। গণমিছিলের নামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করলে ধরে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রাজধানীতে কড়া পাহারায় থাকবে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় পাহারায় থাকবে। প্রতিটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ইউনিট নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে সকাল থেকে বড় জমায়েত করবে। এ ছাড়া মৎস্যজীবী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও কৃষক লীগের আলাদা আলাদা কর্মসূচি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।