বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

চ্যালেঞ্জ অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলা

শক্ত অবস্থানে সরকার, তিন ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

শাহেদ আলী ইরশাদ

চ্যালেঞ্জ অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলা

বৈশ্বিক অথনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় শক্ত অবস্থানে রয়েছে সরকার। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য তিনটি ভবিষ্যৎ ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গর্ভনর বলেছেন, এ ধরনের কোনো একটা ধাক্কায় বাংলাদেশের অর্থনীতি পড়ে যাবে না। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তিনটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো হলো- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের স্থায়িত্ব ও ব্যাপ্তি, ফেডারেল রিজার্ভের পলিসি ইন্টারেস্ট রেট বাড়ানোর আগ্রাসী কার্যক্রম এবং চীনের কভিড পরিস্থিতি। এই তিনটি সূচক ভালো হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট ভালো অবস্থানে থাকবে। আর যদি খারাপ হয় সেটাও মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের          শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ধারেকাছে ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যে বিবৃতি দিয়েছে, সেদিক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য ঠিক আছে। যেখানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে মন্দা চলছে, নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, কাজেই এক দিক থেকে ঠিক আছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে কয়েক ধরনের হার, ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলোর দিকে বেশি দৃষ্টি দিতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান তিনটি বৈশ্বিক ইস্যুর ওপর নির্ভর করে। প্রথমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কতটা ভয়াবহ হবে এবং যুদ্ধ কত দিন চলবে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের  (ফেড) বাড়ানো সুদহার কত দিন চলমান থাকবে। তৃতীয়ত চীনের জিরো কভিড পলিসি নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি করে। আবার তারা সবকিছু ওপেন করে দিলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের জন্য হুমকি। কারণ তাদের কভিড বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব ঝুঁকি বিবেচনা করেই বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি প্রণয়ন করেছে। দেশের অর্থনীতিতে অপ্রত্যাশিত কোনো কিছু যাতে না ঘটে সে জন্য অত্যন্ত সচেতন অবস্থানে রয়েছে দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। ঝুঁকিগুলো মোকাবিলার জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব উদ্যোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ডলারের একক বিনিময় হার কার্যকর করা। বর্তমানে দেশে ডলারের কয়েক ধরনের বিনিময় হার রয়েছে। চলতি বছর জুনের মধ্যে এক ধরনের বিনিময় হার কার্যকর করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে বিনিময় হারে ডলার ক্রয়-বিক্রয়ে সর্বোচ্চ পার্থক্য হবে পয়েন্ট বেসিসে ২ শতাংশ। আমদানি-রপ্তানি গতিশীল করার জন্য উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ৫০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রি-ফাইন্যান্সিং তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় বিলাসী পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ডলারের খুচরা বিক্রি কোটা কমানো হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফরেন কারেন্সি অ্যাকাউন্ট খোলা সহজ করার পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রা হিসাবের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। নগদ টাকার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার তারল্যের ওপর সজাগ দৃষ্টি রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হুন্ডিতে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসী আয় দেশে আনার কাজ শুরু হয়েছে।

একই সঙ্গে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নও করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলও মিলেছে। গেল বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি আয় এসেছে ২ হাজার ৭৩০ কোটি ডলার। রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলার। অন্যদিকে একই সময়ে আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ১২০ কোটি ডলার। ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ব্যবধান অনেক কমে এসেছে। ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের অর্থ পাচার রোধে ঋণপত্র খোলার সময় যাচাই-বাছাই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির সহনশীলতা অত্যন্ত গভীর। কোনো একটা ধাক্কায় বাংলাদেশের অর্থনীতি কখনো পড়ে যাবে না। অর্থনীতিকে আমরা সেভাবেই শক্তিশালী করতে পেরেছি।’

তিনটি বৈশ্বিক সূচকের বিষয়ে গর্ভনর বলেন, ‘এই তিনটি সূচকের অবস্থা খারাপ হলেও আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা আর খারাপ হবে না। আমরা অর্থনীতিকে সেভাবেই শক্তিশালী করতে পেরেছি। খারাপ অবস্থায় আমরা যাব না।’

এদিকে ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের অর্থনীতি পাঁচ ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে সংস্থাটি বলেছে, দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেশের অর্থনীতির প্রধান ঝুঁকি। বাকি চার ঝুঁকির খাত হিসেবে বলা হয়েছে ঋণ সংকট, উচ্চ পণ্যমূল্যের ধাক্কা, মানবসৃষ্ট পরিবেশগত ক্ষতি ও সম্পদের জন্য ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা।

সর্বশেষ খবর