শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

তুরাগ তীরে বৃহত্তম জুমার জামাত, কাল মোনাজাত

বিশ্ব ইজতেমা

গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি

তুরাগ তীরে বৃহত্তম জুমার জামাত, কাল মোনাজাত

টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে গতকাল জুমার নামাজে অংশ নিতে লাখো মুসল্লির ঢল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

দ্বিতীয় পর্ব শুরুর দিন জুমাবার হওয়ায় ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহত্তম জুমার জামাত। ইমামতি করেন মাওলানা সা’দ কান্ধলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি। গতকাল সকাল থেকেই টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার লাখো মুসল্লির ঢল নামে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। ইজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমাস্থলে হাজির হন। প্রথম পর্বের তুলনায় এ পর্বে শীতের তীব্রতা কম হওয়ায় ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে ইজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। মূল প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডের পাশ ঘেঁষে ইজতেমা মাঠের উত্তর দিকের রাস্তায় ও খোলা জায়গার ওপর অবস্থান নেন। ইজতেমা ময়দান এবং এর আশপাশ এলাকায় যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু পাঞ্জাবি আর টুপি পরা মানুষ আর মানুষ। বেশির ভাগ মুসল্লিকে খবরের কাগজ, জায়নামাজ, পলিথিন ও হোগলা বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। কাল রবিবার দুপুরের আগে যে কোনো সময় আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

গতকাল বাদ ফজর পাকিস্তানের মুরব্বি মাওলানা ওসমানের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। সকাল ১০টায় বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইউসুফ। বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা মনির বিন ইউসুফ। ১টা ৩৫ মিনিটে জুমার নামাজের খুতবা শেষে পৌনে ২টায় নামাজ শুরু হয়। জুমার নামাজ শেষে দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের খোঁজখবর নেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম। বাদ জুমা বয়ান করেন বাংলাদেশি আমির ওয়াসিফুল ইসলাম। বাদ আসর বয়ান করেন মাওলানা সাঈদ বিন সা’দ। বাংলায় তরজমা করেন মুফতি আজিমুদ্দিন। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ইউসুফ বিন সা’দ। বাংলায় তরজমা করেন মুফতি বিন কাসিম। ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত মূল বয়ান মঞ্চ থেকে বয়ান করা হয়। গত ১৩ জানুয়ারি ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এরপর চার দিন বিরতি দিয়ে গতকাল ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে কাল রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার উভয় পর্ব। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন মাওলানা সা’দ কান্ধলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি।

ইজতেমায় আসছেন না মাওলানা সা’দ : তাবলিগ জামাতের বাংলাদেশের শীর্ষ শুরা সদস্য প্রকৌশলী ওয়াসেফুল ইসলাম জানান, ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভি এবারও ইজতেমায় আসছেন না। তবে বৃহস্পতিবার সকালে জামাতসহ তাঁর তিন ছেলে ও মেয়ের জামাতা ময়দানে এসেছেন। তাঁরা হলেন, বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি, মেজো ছেলে মাওলানা সাঈদ কান্ধলভি ও ছোট ছেলে মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলভি এবং মেয়ের জামাতা মাওলানা হাসান। তাঁরা বিদেশি তাঁবুর ১ নম্বর বিল্ডিংয়ে বিশ্ব ইজতেমার শীর্ষস্থানীয় শুরা সদস্যদের সঙ্গে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে নিজামুদ্দিন মারকাজের পক্ষ থেকে আসা প্রতিনিধি দল ইজতেমায় এসে পৌঁছেছেন। তাদের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হচ্ছে এবারের বিশ্ব ইজতেমার এ পর্ব।

তাৎক্ষণিক অনুবাদ : বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তাবলিগ মারকাজের ১৫-২০ জন শুরা সদস্য ও বুজর্গ পর্যায়ক্রমে বয়ান পেশ করেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও তা বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিকভাবে অনুবাদ করা হচ্ছে। বিদেশি মেহমানদের জন্য নির্মিত মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বপাশে হোগলা পাটিতে বসেন তাঁরা। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান।

শেষ দুই দিন যাঁরা বয়ান করবেন : বিশ্ব ইজতেমার এ পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম জানিয়েছেন, শনিবার (২১ জানুয়ারি) ফজরের নামাজের পর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ইয়াকুব, বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ, এ দিন জোহরের পর বয়ান করবেন তুর্কির মাওলানা ওমর। আসরের নামাজের পর বয়ান করবেন মাওলানা ইলিয়াস বিন সা’দ কান্ধলভি, বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা ওসামা ইসলাম। মাগরিবের নামাজের পর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা আবদুস সাত্তার, বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম। রবিবার (২২ জানুয়ারি) বিশ্ব ইজতেমার শেষ দিনে ফজরের নামাজের পর বয়ান করবেন মাওলানা মুরসালিন। এরপর হিদায়াতি বয়ান ও আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন ভারতের মাওলানা সা’দ কান্ধলভির বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভি। তাঁর বয়ান বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা জিয়া বিন কাসিম।

মুসল্লিদের দুর্ভোগ : ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে তুরাগ নদের তীরে পাকা টয়লেট ও অজুখানা না থাকায় মুসল্লিদের কষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া নদের পানি বিষাক্ত থাকায় এমনিতেই ব্যবহারের অনুপযোগী। অন্যদিকে ময়দানের ভিতরে ময়লার  ভাগাড়। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মুসল্লিরা। গাজীপুর সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি নজরদারিতে না রাখায় ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ময়দানে হাঁটতে হচ্ছে নাক-মুখ চেপে।

বিশেষ ট্রেন চলাচল : ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাতের দিন কালও ময়মনসিংহ-টঙ্গী, ঢাকা-টঙ্গী ও টাঙ্গাইল-টঙ্গী রুটে ১৩টি অতিরিক্ত ট্রেন চলাচল করবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাকিবুর রহমান। ইজতেমা ময়দানের মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম বলেন, গতকাল পর্যন্ত ৫৮টি দেশের ৪ হাজার ৭৯১ জন বিদেশি মুসল্লি ময়দানে প্রবেশ করেছেন। অনেকে এখনো পথে রয়েছেন। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত বিদেশি মুসল্লি আসতে থাকবেন।

মুসল্লির মৃত্যু : টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে গতকাল ভোর রাতে এক মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। নিহত মফিজুল ইসলাম (৭৫) বরগুনা জেলার আবদুল আলীম রানার ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেছেন, পুরো ইজতেমা মাঠ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর