সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
ফিরে গেলেন ঢাকা সফর শেষে

সংকট নিরসনে ব্যস্ত মালয়েশীয় মন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সংকট নিরসনে ব্যস্ত মালয়েশীয় মন্ত্রী

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন বিন ইসমাইল বলেছেন, আমরা অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনতে চাচ্ছি। আগামী দিনে দুই দেশের প্রতিনিধিরা বসবেন, তারা রিভিউ করবেন যে সমঝোতা চুক্তিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন আছে কি না। গতকাল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠক শেষে গতকাল দুপুরে ঢাকা ত্যাগ করেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে শনিবার বিকালে দুই দিনের সফরে ঢাকা এসেছিলেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন বিন ইসমাইল।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আগের করা সমঝোতা চুক্তি নিয়ে কথা বলেছি। আলোচনার একটা বড় অংশ নিয়ে ছিল এই চুক্তি। মালয়েশিয়া সরকার প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে চায়, যাতে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, চাহিদা পূরণ করা, ব্যয় কমানো, বিদেশি কর্মীদের সম্মান রক্ষা করা। যদি বর্তমান প্রক্রিয়ায় সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো না যায়, আমরা পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত। সে জন্য আমরা আলোচনায় বসব। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ১৫ লাখ বিদেশি কর্মী আছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ বাংলাদেশি কর্মী। সেই  কারণেই বাংলাদেশ ১৫টি সোর্স কান্ট্রির মধ্যে প্রথম স্থানে আছে। বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।

মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেন, আমাদের আজকে দুটি ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলাপ হয়েছে। প্রথমত রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম আরও দ্রুত করার বিষয়ে। দ্বিতীয়ত মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসন ব্যয় কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় অনেক অবৈধ কর্মী আছেন। তাদেরকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বৈধ করা হচ্ছে। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে এই প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি জানতে চাই যে, এক সপ্তাহে বৈধকরণের যা অনুমোদন আমরা দিয়েছি তার ৫৫ শতাংশ বাংলাদেশি। আমি মন্ত্রী ইমরান আহমদকে অনুরোধ জানিয়েছি সহযোগিতার জন্য, বাংলাদেশ যেন তাদের অংশটুকু পালন করে, যেন আমরা আমাদের কর্মীর চাহিদা পূরণ করতে পারি। তিনি বলেন, আমরা অনুমোদন দেওয়ার সময় কমিয়ে এনেছি। আগে ২০-৩০ দিন সময় নেওয়া হতো। এখন ২-৩ দিনে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন।

এ সময় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, মালয়েশিয়ার বৈঠকে আমাদের কোনো এজেন্ডা ছিল না। তবে বৈঠকে কর্মীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কিছু আলোচনা হয়েছে। যেহেতু মালয়েশিয়ায় এখন নতুন সরকার, তাই আগামীতে আরও সহজ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। আশা করি, এ মাসের মধ্যেই উভয় দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হবে। দ্রুত সময়েই ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছি।

বাংলাদেশ থেকে সিকিউরিটি গার্ড নেওয়ার আগ্রহ : রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইলের মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন, শ্রমিক সম্পর্কিত বিষয় এবং দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক প্রশিক্ষণ সহযোগিতা, জ্ঞান ও তথ্য বিনিময় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় জানায়, আলোচনায় মালয়েশিয়ার বিভিন্ন স্থাপনায় নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ হতে পেশাদার ও প্রশিক্ষিত আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের নিয়োগদানে অনুরোধ জানান বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। জবাবে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে সিকিউরিটি গার্ড নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ হতে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের তাদের নিজের দেশে প্রত্যাবর্তনে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা কামনা করা হয়। জবাবে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের দেশেও রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে এবং আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনে তাদের দেশের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়া জোরালো ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মালয়েশিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। প্রশিক্ষণ প্রদানসহ দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পারস্পরিক জ্ঞান ও তথ্য বিনিময় এর বিষয়েও দুই মন্ত্রী একমত হন। দুই বৈঠকেই ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলে মালয়েশিয়ার পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত হাসনা হাসিমসহ মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। বৈঠক শেষে সবাই মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর