শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

৩ লাখ টাকায় অস্ত্র সরবরাহ করত ওরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০০৪ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন পলাশ শেখ (৩৮)। ২০১৩ সালে চাকরির জন্য ঢাকায় আসেন। একটি স্বনামধন্য সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি শুরু করেন। ২০১৫ সালে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভুয়া লাইসেন্সে একটি বন্দুক কিনে বেসরকারি ব্যাংকে অধিক বেতনে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি শুরু করেন তিনি। পরে তিনি নিরাপত্তাকর্মীর আড়ালে নিজেই অস্ত্র চোরাচালান ও বিক্রি শুরু করেন। একই সঙ্গে চার-পাঁচজনের একটি দল গঠন করেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র?্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। রবিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের হোতা পলাশ শেখসহ ছয়জনকে আটক করে র‌্যাব-২। অন্যরা হলেন- মনোয়ার হোসেন (৩২), রশিদুল ইসলাম (৪০), নাজীম মোল্লা (৩৫), মারুফ হোসেন (২৪) ও নাইমুল ইসলাম (২২)। তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ওয়ান শুটার গান, সাতটি একনালা বন্দুক, দুটি পিস্তলের ম্যাগজিন, আট রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ওয়ান শুটারের গুলি দুই রাউন্ড, একনলা বন্দুকের গুলি ৬৭ রাউন্ড, ০.২২ বোর রাইফেলের গুলি ৪০ রাউন্ড, ১১টি জাল লাইসেন্স ও ১৯টি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নামের সিল জব্দ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চক্রটি অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান করত। পরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অভিনব কৌশলে ভুয়া ও জাল লাইসেন্স তৈরি করত। এভাবে অবৈধ অস্ত্র বিক্রির জন্য বেসরকারি বিভিন্ন স্বনামধন্য নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা সংক্রান্ত চাকরি দেওয়ার কথা বলে আগ্রহীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিত। চক্রটি চাকরি দেওয়ার জন্য জনপ্রতি ২ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। অবৈধ অস্ত্র ও ভুয়া লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিকিরিউটি গার্ড হিসেবে চাকরি করত। এ ছাড়া চক্রটি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে চড়া দামে জাল লাইসেন্স তৈরি করে অবৈধ অস্ত্র বিক্রি করত। তিনি বলেন, আটক মনোয়ার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ২০১৪ সালে চাকরির জন্য ঢাকায় এসে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি শুরু করেন। চাকরির সুবাদে পলাশের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং পলাশের সহযোগিতায় ২ লাখ টাকার বিনিময়ে তিনি একটি ভুয়া লাইসেন্সের অবৈধ একনলা বন্দুক সংগ্রহ করে একটি বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অধিক বেতনে চাকরি শুরু করেন। পরে পলাশ তাকে বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচার জগতে প্রবেশ করায়। পলাশের নির্দেশনায় মনোয়ার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করত ও ভুয়া লাইসেন্স তৈরির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে অস্ত্র বিক্রি করত। আর রশিদুল স্থানীয় একটি মাদরাসায় দাখিল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ২০১৯ সালে চাকরির জন্য ঢাকায় আসে সে। চাকরির সুবাদে পলাশের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ২ লাখ টাকার বিনিময়ে সেও একইভাবে অবৈধ অস্ত্র কিনে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করত। নাইমুল ইসলাম স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। ২০২০ সালে সে চাকরির জন্য ঢাকায় আসে। পরে পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে পলাশের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পলাশের লোভনীয় বেতনের প্রস্তাবে আকৃষ্ট হয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভুয়া লাইসেন্সের অস্ত্র কিনে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করত। নাজিম মোল্লাও গত বছর ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় অবৈধ অস্ত্র কিনে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করত। মারুফ স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে চলতি বছরে ঢাকায় আসে। ২ লাখ টাকায় অস্ত্র কিনে সেও সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি শুরু করে।

 

সর্বশেষ খবর