বৃহস্পতিবার, ২ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
ইবিতে শিক্ষার্থী নির্যাতন

প্রাধ্যক্ষকে প্রত্যাহার পাঁচজনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার

পাবনা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে প্রথমবর্ষের ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ওই হলের জ্যেষ্ঠ আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আহসানুল হককে নতুন প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে হল প্রশাসনের আবাসিকতা বাতিলের নির্দেশে স্থায়ীভাবে হল ছেড়েছেন ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ পাঁচ অভিযুক্ত ছাত্রী। তারা ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী মেসে উঠেছেন বলে জানা গেছে। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ সময় অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের বিষয়ে আগামী শনিবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। হল ছেড়ে যাওয়া ছাত্রীরা হলেন আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম, চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ঊর্মি এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মোয়াবিয়া, শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের সানজিদা চৌধুরী অন্তরা এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম।

পাঁচ অভিযুক্তকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার : ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা আক্তার অন্তরাসহ পাঁচ নেতা-কর্মীকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলো। পাঁচজনের মধ্যে অন্তরা শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আর বাকিরা শাখা ছাত্রলীগের কর্মী বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘আমাদের উৎসগুলো থেকে তথ্যের ভিত্তিতে বহিষ্কার করেছি। সবার সংশ্লিষ্টতা আছে এটা নিশ্চিত। এখন অপরাধ কতটুকু এটা তো বিবেচ্য বিষয়। এখানে তাদের ভুল বা অন্যায় যেটাই হোক এর গভীরতার ভিত্তিতে বহিষ্কারাদেশ কার্যকর হবে। এটা স্থায়ীও হতে পারে, অস্থায়ীও হতে পারে। অভিযুক্তদের হল ছাড়ার বিষয় নিশ্চিত করে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামছুল আলম বলেন, হাই কোর্টের নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই অন্তরা ও তাবাসসুম ওই দিন সন্ধ্যায় হল ত্যাগ করেন। পরে হলের পক্ষ থেকে আবাসিকতা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানালে গতকাল দিনের বিভিন্ন সময়ে বাকিরা সবাই হল ছেড়েছে। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘হাই কোর্ট থেকে যে বার্তা পেয়েছি সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষকে প্রত্যাহার করেছি। হলের জ্যেষ্ঠ আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আহসানুল হককে সাময়িকভাবে হল চালানোর জন্য বলা হয়েছে।’

অভিযুক্তদের বহিষ্কারের আদেশেও আতঙ্ক কাটেনি ফুলপরীর : অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে বহিষ্কারে হাই কোর্টের আদেশেও আতঙ্ক কাটেনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার ফুলপরীর। অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ইবি শিক্ষার্থী ফুলপরী ও তার পরিবার। আদালত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ফুলপরীর নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিলেও তাতে আশ্বস্ত হতে পারছেন না তারা। গতকাল ফুলপরীর বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। এ সময় ফুলপরী বলেন, ‘আমার ওপর নির্যাতনের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ায় আমি হাই কোর্টের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু তারা স্থায়ী বহিষ্কার না হওয়ায় আমি হতাশ। কারণ অভিযুক্তরা আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার ও পড়ার কোনো যোগ্যতা নেই ওদের। আমি তাদের সবাইকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। ন্যায়বিচার ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আমি কুষ্টিয়া আদালতে মামলা করব।’ এ সময় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। ফুলপরীর বড় ভাই হজরত আলী বলেন, ‘অভিযুক্তরা যে ধরনের অপরাধ করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। তারা স্থায়ী বহিষ্কার ও শাস্তির আওতায় না এলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। আমরা চাই এ ঘটনায় দোষীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাক, যাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এমন নিষ্ঠুর র‌্যাগিং সংস্কৃতির মূলোৎপাটন হয়।’

সর্বশেষ খবর