মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামস জামিনে মুক্ত

আদালত প্রতিবেদক

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামস জামিনে মুক্ত

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দি সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে জামিন দিয়েছেন আদালত। গতকাল বেলা ২টার পর ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আসাদুজ্জামান নূর ২০ হাজার টাকা মুচলেকায় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় কারাগার থেকে মুক্তি পান সাংবাদিক শামসুজ্জামান।

এর আগে শামসের আইনজীবী আমিনুল গণি টিটো ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার আদালতে জামিন শুনানিতে বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রপক্ষের বন্ধুদের ভাত-মাছের সমস্যা না থাকতে পারে, কিন্তু প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের আছে। নিউজে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের আকাক্সক্ষা ফুটে উঠেছে তাদের ভাষ্য দিয়ে। কলমের স্বাধীনতা বন্ধ করা যাবে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে সাংবাদিকের কলম শৃঙ্খলিত করা উচিত নয়। কোনো সাংবাদিক যদি অপরাধ করেন সেই অপরাধের বিচারের জন্য প্রেস কাউন্সিল আছে। সেখানে বিচার না চেয়ে হয়রানি করার জন্য থানায় মামলা করা হয়েছে। এ মামলার অভিযোগ সত্য নয়। কারণ সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় ফুলবিক্রেতা এমন ১২-১৩ জনের বক্তব্য আর একজন দিনমজুরের বক্তব্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে উদ্ধৃতিদাতা হিসেবে দিনমজুর জাকির হোসেনের নাম থাকলেও ছবি দেওয়া হয় একটি শিশুর। পোস্ট দেওয়ার পর অসংগতি নজরে আসে এবং দ্রুত তা প্রত্যাহার করা হয়। পাশাপাশি প্রতিবেদন সংশোধন করে সংশোধনীর বিষয়টি উল্লেখসহ পরে আবার অনলাইনে প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের কোথাও বলা হয়নি যে উক্তিটি ওই শিশুর; বরং স্পষ্টভাবেই বলা হয়েছে, উক্তিটি দিনমজুর জাকির হোসেনের।

অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু ও আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবউল্লাহ হিরু বলেন, যারা স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না তারা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের উদ্দেশ্যে এসব কাজ করছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। যার বক্তব্য প্রকাশ করা হলো সেই জাকির কোথায়? সরকারের ভালোটা তাদের চোখে পড়ে না। দুই পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রথম আলোয় ২৬ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেওয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভিতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

প্রতিবেদন প্রকাশের তিন দিন পর ২৯ মার্চ ভোরে শামসকে তার ঢাকার সাভারের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সিআইডি। প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের নেতা মো. গোলাম কিবরিয়া ঢাকার তেজগাঁও থানায় এবং আইনজীবী মশিউর মালেক রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দুটি মামলা করেন। এর মধ্যে রমনা থানার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে শামসকে আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। চার দিন পর জামিন পান সাংবাদিক শামস।

সর্বশেষ খবর