বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

ট্রাম্পের ১৩৬ বছর দণ্ড হতে পারে!

আদালত থেকে বেরিয়ে বললেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হতে পারে বাইডেনের অধীনে

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্পের ১৩৬ বছর দণ্ড হতে পারে!

সাবেক পর্নো তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ প্রদানের মামলায় আদালতে হাজিরা দেওয়ার পর বাসায় পৌঁছে কড়া বক্তব্য দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা যুক্তরাষ্ট্রকে জাহান্নামে পাঠাচ্ছে। তারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছে। ট্রাম্প গতকাল (যুক্তরাষ্ট্রের সময় মঙ্গলবার) নিজস্ব উড়োজাহাজে করে আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। তিনি যথানিয়মে হাজিরা দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। ড্যানিয়েলসকে গোপনে অর্থ দেওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায়িক রেকর্ড নিয়ে মিথ্যাচারসহ ৩৪টি অভিযোগে ম্যানহাটানের আদালতে হাজির হতে হয় যুক্তরাষ্ট্রের এই ৪৫তম প্রেসিডেন্টকে। আদালত ও গোয়েন্দা সংস্থার ডজনের বেশি কর্মকর্তা পরিবেষ্টিত অবস্থায় ট্রাম্প সব অভিযোগেই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। ম্যানহাটানের আদালতে ট্রাম্পের মামলায় ঘণ্টাখানেকের মতো শুনানি হয়। সেখানে কৌঁসুলিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘হুমকি দিয়ে পোস্ট’ দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। পরে বিচারক হুয়ান মারচেন মামলা খারিজ বা মামলা সংক্রান্ত অন্য যে কোনো আবেদন করতে ট্রাম্পের আইনজীবীদের ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন।

ট্রাম্প আদালতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি। তাঁকে সে সময় বেশ বিষণ্ন এবং শান্ত থাকতে দেখা গেছে। হাজিরা শেষে আদালত থেকে বের হয়েই দ্রুত ফ্লোরিডায় ফিরে আসেন ট্রাম্প। এরপর মার-আ-লগোতে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি আদালতের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ‘আমার মামলায় এখন ট্রাম্পবিদ্বেষী এক বিচারক আছেন, যিনি ট্রাম্পবিদ্বেষী পরিবার থেকে এসেছেন।’ ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বিরোধীরা যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে। জাহান্নামে যাচ্ছে আমাদের দেশ।’ তিনি ক্ষমতাসীনদের সতর্ক করে বলেন, ‘জো বাইডেন প্রশাসনের অধীনে সম্ভবত তৃতীয় পরমাণু বিশ্বযুদ্ধের মুখোমুখি হতে পারে বিশ্ব।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান মার্কিন সরকারের সময়ে বিভিন্ন দেশ প্রকাশ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছে, যা তাঁর প্রশাসনের সময় হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে একটি বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে। আমাদের অর্থনীতি বিপর্যস্ত। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। রাশিয়া চীনের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। আপনারা সেটা বিশ্বাস করতে পারেন? সৌদি আরবও ইরানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। চীন, রাশিয়া, ইরান এবং উত্তর কোরিয়া একত্রে একটি ভয়ংকর এবং ধ্বংসাত্মক জোট হিসেবে গঠিত হয়েছে, যা আমি নেতৃত্বে থাকার সময় কখনোই সম্ভব হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, আমি যদি আপনাদের প্রেসিডেন্ট থাকতাম তবে এটা কখনোই ঘটত না। রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করত না। অনেক জীবন রক্ষা পেত। সুন্দর সুন্দর শহর এখনো দাঁড়িয়ে থাকত।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, তাঁর উত্তরসূরি বাইডেন দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ পাঁচজন প্রেসিডেন্টের কথা বলেন এবং তাদের কর্মকাণ্ড একত্র করেন- তারপরও বাইডেন প্রশাসনের মতো এতটা ধ্বংসাত্মক আর কেউ হয়নি।’

বক্তব্যে ট্রাম্প ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে নামার পর থেকে তাঁর ভাষায় তাঁর ওপর যেভাবে নির্যাতন নেমে এসেছে- সেগুলোও একে একে উল্লেখ করেন। দুই বছর পর হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এ রাজনীতিক উল্লেখ করেন, তাঁর নির্বাচনী প্রচারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে ডেমোক্র্যাটরা যে ষড়যন্ত্র করেছে, তার শিকার তিনি। এদিকে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ড্যানিয়েলসের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসকেই নাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের আইনে সাবেক ওই পর্নো তারকার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক থাকা নিয়ে কোনো বাধা নেই। কিন্তু গোল বেঁধেছে গোপনে অর্থ প্রদান নিয়ে। যদিও ট্রাম্প তাঁর বিরুদ্ধে আনা এ অভিযোগকে মিথ্যা বলেই দাবি করছেন।

দণ্ড হতে পারে ১৩৬ বছরের : সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ম্যানহাটান ক্রিমিনাল কোর্টে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হলে অর্থাৎ ট্রাম্প যদি দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে তাঁকে ৩৪ কাউন্টে মোট ১৩৬ বছর কারাগারে থাকতে হবে। অর্থাৎ ৩৪টি অপরাধের প্রতিটির জন্য তাঁর সর্বোচ্চ চার বছর করে কারাদণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে। অপরাধ নিয়ে কর্মরত আইনজীবীরা এ কথা বলেছেন।

তবে সবটাই নির্ভর করবে মাননীয় আদালতের ওপর। আদালত ইচ্ছা করলে সব অভিযোগের সাজা একইসঙ্গে ভোগের নির্দেশ দিতেও পারেন। সে ক্ষেত্রে ট্রাম্পকে সর্বোচ্চ চার বছর কারাগারে থাকতে হবে। অবশ্য ট্রাম্পের হাজিরার সময় প্রসিকিউটররা উল্লেখ করেছেন, উত্থাপিত অভিযোগসমূহ প্রমাণিত হলেও বাধ্যতামূলক কারাদণ্ডের বিধান নেই। কারণ, এর আগে আর কোনো অপরাধের জন্য ট্রাম্প কখনোই দোষী সাব্যস্ত হননি অথবা কারাবরণ করেননি। প্রথমবার অপরাধের জন্য ট্রাম্পকে হয়তো কারাগারে না-ও পাঠাতে হতে পারে। তবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট পদে পুনরায় প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাতে পারেন, যদি সামনের বছরের নভেম্বরের আগেই ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হয়ে উচ্চতর আদালতে আপিলের সুযোগও কাজে লাগাতে না পারেন। ট্রাম্পের অ্যাটর্নি জো টাকোপিনা এরই মধ্যে জানিয়েছেন যে, তার মক্কেলের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা খারিজে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন। ট্রাম্প নিজেও অভিযোগ করেছেন যে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর নিশ্চিত বিজয় জেনেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটরা তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি দেশে এমন ঘটনা তিনি কখনো কল্পনাও করতে পারেননি বলে আদালত থেকে বেরিয়ে ফ্লোরিডায় নিজ বাসায় সমবেত দলীয় সমর্থকদের সমাবেশে মন্তব্য করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ইঙ্গিত করে অভিযোগ করেন, এভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের আইন আদালতকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে, ট্রাম্পের আত্মসমর্পণ এবং ফ্লোরিডায় ফিরে দলীয় সমর্থকদের সমাবেশে বাইডেনের বিরুদ্ধে, বাইডেন পুত্র হান্টার এবং ট্রাম্পের প্রধান প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ উত্থাপন করলেও বুধবার ভোর পর্যন্ত কোনো কথা শোনা যায়নি হোয়াইট হাউস অথবা হিলারির পক্ষ থেকে।

সর্বশেষ খবর