রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

লাশের সারি ওড়িশায়

প্রতিদিন ডেস্ক

লাশের সারি ওড়িশায়

কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভয়ংকর ওলটপালট, বিকট শব্দ, বিস্ফোরণ, ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনা। এক লহমায় অনেক কিছু। সবশেষে জড়ো হতে থাকে লাশের পর লাশ। ছিন্নভিন্ন হওয়া অর্ধমৃত আর আহতের সারি বাড়তে থাকে। দুঃস্বপ্নের মতো ঘটে যাওয়া ট্রেন দুর্ঘটনায় এই দৃশ্যের অবতারণা হয় ভারতের ওড়িশায়। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে যাত্রীরা যখন ঘোর আর ঘুমের মধ্যে ট্রেনে ছুটছিলেন, তখনই ১২৭ কিলোমিটার গতি নিয়ে ট্রেন নির্ধারিত লাইন ছেড়ে চলে যায় অন্যদিকে। তার পরই ঘটে ভয়ংকর দুর্ঘটনা। সূত্র : ভারতীয় গণমাধ্যম। খবরে বলা হয়, শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে কলকাতায় হাওড়ার নিকটবর্তী শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে চেন্নাইগামী করমন্ডল এক্সপ্রেস। এটি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওড়িশার বালেশ্বরে পৌঁছায়, আধঘণ্টা পর বাহানগা বাজারের কাছে ২৩ কামরার ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ২৮৮ আর আহত হাজার ছাড়িয়ে গেছে। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনে থাকা স্বপন কুমার নামে এক যাত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, হঠাৎ বিকট শব্দের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন আমার ওপর এসে হুড়মুড়িয়ে পড়ে; কোনোভাবে সেখান থেকে বের হয়ে দেখি বেশ কিছু কোচের নিচে অনেকে আটকে আছে, তাদের গগনবিদারী আর্তনাদ আর চিৎকার ভেসে আসছিল।’ অনুভব দাস নামে এক যাত্রী টুইটারে লেখেন, ‘বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসের তিনটি সাধারণ কোচ সম্পূর্ণভাবে লাইনচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করমন্ডল এক্সপ্রেসের জেনারেল, স্লিপার, এসি থ্রি টায়ার, এসি টু টায়ারসহ ১৩টি কোচ সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ তিনি নিজেই ২৫০-এর বেশি লাশ জড়ো করা দেখেছেন বলে উল্লেখ করেন। দুর্ঘটনা সম্পর্কে খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, করমন্ডল এক্সপ্রেস লাইন ছেড়ে যাওয়ার পর পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি মালগাড়িকে। এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন সেই মালগাড়ির ওপর উঠে যায়। ২৩টি বগির মধ্যে ১৫টি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে পাশের ডাউন লাইনে। সেই লাইন দিয়ে তখন আসছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। করমন্ডল এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত বগিগুলো গিয়ে পড়ে সেই লাইনের ওপর। বেঙ্গালুরু-হাওড়া ট্রেনটির দুটি কামরাও তখন লাইনচ্যুত হয়। ঘটনাস্থলের বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রেনের কামরা একটার ওপর আরেকটা উঠে গেছে, কোনোটা উল্টে গেছে। চাকাগুলো ওপরের দিকে। কয়েকটা পাশের নয়ানজুলিতে পড়ে। মালগাড়ির ওপরে ওঠে পড়েছে আস্ত একটা ইঞ্জিন। যেন উড়ে গিয়ে ঘাড়ের ওপর চড়ে বসেছে। রেললাইনে সিমেন্টের স্লিপারগুলো ভেঙেচুরে লোহার রড বেরিয়ে গেছে। উপড়ে গেছে বিদ্যুতের খুঁটি। ছড়িয়ে থাকা মৃতদেহগুলো ঢাকা সাদা কাপড়ে, তার মধ্যেই ভেসে আসে কান্নার আওয়াজ, চিৎকার, আর্তনাদ। আর সবকিছু ছাপিয়ে যাচ্ছিল অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন। ভয়াবহ এ ট্রেন দুর্ঘটনায় ভারতের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে শোক জানিয়েছেন। হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর ন্যাশনাল রিলিফ ফান্ড থেকে নিহত পরিবারের জন্য ২ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আহতদের ৫০ হাজার রুপি দেওয়া হবে। এদিন রেলের পক্ষ থেকে গতকাল প্রাথমিকভাবে একটি যৌথ পরিদর্শন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সেখানে বালেশ্বরে করমন্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে সিগন্যালের ত্রুটিকে। বলা হয়, বিস্তারিত জানানো হবে তদন্তের পর। যৌথ পরিদর্শন রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, ‘আপ মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনটি সেই লাইনে ঢোকেইনি। ট্রেন ঢুকেছিল লুপ লাইনে। সেখানে আগে থেকে একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। তার সঙ্গে সংঘর্ষে করমন্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।’ কিন্তু মেইন লাইনে সবুজ সিগন্যাল পাওয়া সত্ত্বেও করমন্ডল এক্সপ্রেস কীভাবে লুপ লাইনে ঢুকে পড়ল, তা অনেকের কাছেই স্পষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে সিগন্যাল দেওয়ায় কোনো গোলমাল হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ গতকাল জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৯০০-এর বেশি। উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আহতদের দুর্ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই তাদের চিকিৎসা চলছে। এরই মধ্যে রেলের তরফে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে শীর্ষনেতাদের মধ্যে গতকাল দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর