সোমবার, ২৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

বেনজীরের আরও সম্পদ জব্দ

♦ গুলশানের চার অভিজাত ফ্ল্যাট, ১১৫ দলিলে ৯১ একর জমি ক্রোকের আদেশ ♦ সঞ্চয়পত্র, ১৯ কোম্পানির মালিকানা এবং তিন বিও অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ ♦ ক্রোকের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে : দুদক আইনজীবী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেনজীরের আরও সম্পদ জব্দ

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা আরও ১১৯টি দলিলের জমি ও ফ্ল্যাট ক্রোকের (জব্দ) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে সঞ্চয়পত্র, তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট এবং ১৯টি প্রতিষ্ঠানের মালিকানা শেয়ার ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর আদালতের সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।

আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, মানি লন্ডারিং আইন ২০১২ এর ১৪ ধারা এবং দুদক বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি ১৮ অনুযায়ী সব স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ ফ্রিজের আদেশ দেওয়া হলো। ক্রোক হওয়া সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাবে না এবং জব্দকৃত ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দেওয়া গেলেও উত্তোলন করা যাবে না। সেই মর্মে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার, এসি ল্যান্ড বিএসইসি ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদেশের বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান, বেনজীর ও তার পরিবারের সম্পত্তির ১১৫টি জমির দলিল,  ঢাকার চারটি ফ্ল্যাট, চারটি শতভাগ মালিকানাধীন কোম্পানি, ১৫টি আংশিক মালিকানার কোম্পানি ও তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট জব্দের জন্য দুদকের পক্ষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আবেদন করেন। আদালত তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনটি মঞ্জুর করে এসব আদেশ দেন।

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলেভুক্ত সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। পরে তার আরও সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়। সেসব সম্পদ ক্রোকের আদেশ চেয়ে দুদক আদালতে আবেদন করে।

আদেশে বেনজীরের স্ত্রী জিশান মীর্জার নামে থাকা গুলশারের চারটি বিলাশবহুল ফ্ল্যাট, মাদারীপুরে রাজৈরের সাতপাড় ডুমুরিয়া মৌজায় ১১৩টি দলিলে ৯০ দশমিক ০৮৫৬ একর জমি, শিবচরে একটি দলিলে ৫ কাঠা জমি এবং ঢাকার সাভারের মৈস্তাপাড়া মৌজায় ৩ কাঠা জমি ক্রোক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের রমনা কর্পোরেট শাখায় ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, শান্তা সিকিউরিটিজে জিশান মীর্জার নামে থাকা বিও অ্যাকাউন্ট, একই প্রতিষ্ঠানে মেয়ে তাহসীন রাইসা বীনতে বেনজীরের নামে থাকা বিও অ্যাকাউন্ট, লংকা সিকিউরিটিজে বেনজীর আহমেদের নামে থাকা বিও অ্যাকাউন্ট, সাভানা ন্যাচারাল পার্কের মালিকানা শেয়ার, সাভানা এগ্রো লিমিটেডের শেয়ার, সাভানা ইকো রিসোর্টের মালিকানা শেয়ার, একটি শিশির বিন্দু লিমিটেডের পূর্ণ মালিকানা শেয়ার ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়া নর্থ চিকস রংপুর লি., নর্দান বিজনেস অ্যাসোসিয়েটস, সেন্ট পিটার্স স্কুল অব লন্ডন, স্টেইলথ ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলা টি ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ, ডেলটা আর্টিসান্স, ইস্ট ভ্যালি ডেইরি, গ্রিন মাল্টিমিডিয়া, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, কমিউনিটি ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লি., সেন্ট্রার ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ল’ অ্যানফোর্সমেন্ট রিসার্স ফাউন্ডেশন, পুলিশ ট্রাস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাক্ট, পুলিশ ট্রাস্ট সার্ভিস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট, পুলিশ ট্রাস্ট কন্সট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং মেসার্স সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ এর আংশিক মালিকানা শেয়ার ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে থাকা ১১৪ একর জমি জব্দ (ক্রোক) এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে তাদের নামে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ দেন আদালত।

এই জব্দের আদেশের বিষয়ে দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার বিষয়ে আদালত যে আদেশ দিয়েছিল, তা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি। খুরশীদ বলেন, সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাবগুলো অবরুদ্ধের আদেশের অনুলিপি দুদকের হাতে এসেছে। পর্যায়ক্রমে আদালতের আদেশ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার কার্যালয় ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি র‌্যাবের মহাপরিচালক ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব এবং র‌্যাবে সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন।

সর্বশেষ খবর