শিরোনাম
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক

সংসদ নির্বাচন হবে যে পথে

সংস্কার প্রতিবেদনের পর সংলাপ, তারপর জাতীয় নির্বাচনের কথা ভাবছে সরকার, শ্রম অসন্তোষের পেছনে বিদেশি শক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংসদ নির্বাচন হবে যে পথে

সরকার আশা করছে, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য গঠিত ছয়টি কমিশন তিন মাসের মধ্যে তাদের রিপোর্ট দিতে পারবে। রিপোর্ট পাওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে যাবে সরকার। ওই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে তার পর নির্বাচনের কথা ভাবছে সরকার। গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

এ সময় যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, তৈরি পোশাক কারখানায় চলমান শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে বিদেশি শক্তি কাজ করছে। বাংলাদেশ থেকে অর্ডার বাতিল হয়ে যেসব দেশে যাচ্ছে, সেই দেশগুলো শ্রমিক অসন্তোষ তৈরিতে প্রভাব রাখতে পারে। এমনটি মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গতকাল সকালে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত জানাতে এই প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। 

ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন ও তাদের কার্যক্রমের সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এরশাদ সরকারের আমলে পুলিশ কমিশন গঠনের পরও বাস্তবায়ন না হওয়া প্রসঙ্গ তুলে বর্তমান সরকারের কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এই সরকারের উদ্দেশ্যই হচ্ছে একটা প্রকৃত গণতন্ত্রের দিকে এ দেশটাকে নিয়ে যাওয়া। যেহেতু এরশাদ সরকারের সঙ্গে এই সরকারের ফাউন্ডেশনগত পার্থক্য রয়েছে, ফলে তার সঙ্গে আমাদের কর্মপরিকল্পনা কোনোভাবেই মেলানো যাবে না। আগামী তিন মাসের মধ্যে গঠিত কমিশন রিপোর্ট দেবে, এমনটি আশা করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, এগুলো আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা সেটা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐক্যের ওপর। এজন্য সংস্কার বিষয়ে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চাচ্ছি। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নিশ্চয় এতদিনে এ উপলব্ধি এসেছে- এরশাদ সরকার যা করে যেতে পারেনি, তার ফল কী হয়েছে তাও রাজনৈতিক দলগুলো দেখেছে। তারাও কোনো সংস্কার করেনি। এর ফল কী হয়েছে, এটাও গোটা জাতি ৫ আগস্ট দেখেছে। কোনো রাজনৈতিক দল নিশ্চয় অজনপ্রিয় হয়ে আবার একইরকম ফলাফল দেখতে চাইবে না। এ কারণে আমরা সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক মতৈক্য গড়ে সংস্কার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে তার পর নির্বাচনের কথা ভাবছি। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছে- আগে সংস্কার তার পর তারা নির্বাচনে যেতে চায়।

শ্রম অসন্তোষের পেছনে বিদেশি শক্তি : গতকাল দুপুরে গাজীপুর কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান অভিযোগ করেন, শ্রম অসন্তোষের পেছনে স্থানীয় চক্রের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত। সচিবের এ বক্তব্য সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান জানতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে কিছু (গোয়েন্দা) রিপোর্ট পেয়েছি, যেটা আমাদের ওই দিকেই (বিদেশি ষড়যন্ত্র) ইঙ্গিত করে। রেজাল্টটা যদি দেখেন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর সিজনাল বিজনেসের সময়। যে অর্ডার মার্কেটে যাবে তার তিন মাস আগেই মালিকপক্ষকে প্রস্তুত করতে হয়। সে অর্ডারগুলো অনেক জায়গায় ক্যানসেল হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ অর্ডার ক্যানসেল হয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু নির্দিষ্ট দেশ সেই অর্ডারগুলো নেওয়ার জন্য লবিং করছে। তারা উঠেপড়ে লেগেছে। সেই জায়গা থেকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এই কথাটি (বিদেশি ষড়যন্ত্র) বলেছেন। খুব দ্রুতই শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আসবে আশা প্রকাশ করে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, কোনো শ্রমিক তার ফ্যাক্টরিতে হামলা করবে না কখনো। কারণ মাস শেষে সে বেতনটা পাবে না। ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি শ্রমিকের হয়। মালিক তো বিত্তশালী। কোনো শ্রমিক এখনো পর্যন্ত কোনো ফ্যাক্টরিতে হামলা করেনি; এখন পর্যন্ত এ-সংক্রান্ত কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা দেখেছি, সেখানে বেকার যুব সংঘ নামে যারা ফ্যাক্টরিতে হামলা চালিয়েছে, অনেক শ্রমিক বেরিয়ে এসে তাদের প্রতিহত করেছে।

কারখানায় হামলার অভিযোগে নেত্রকোনা থেকে বেকার যুব সংঘের একজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়ে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, আমরা শুনেছি সে ছাত্রলীগের নেতা ছিল। তিনি বলেন, ভিতরে ষড়যন্ত্র যেমন আছে, তেমনি শ্রমিকদের কিছু জেনুইন দাবিদাওয়া আছে। দীর্ঘ ১৬ বছর শ্রমিকরা যে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন, তারা যে কথাগুলো বলতে পারতেন না- একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির হওয়ায় তারা সে কথা বলার স্বাধীনতা পাচ্ছেন। আমরা শ্রমিকদের এই কথা বলাকে সাধুবাদ জানিয়ে একটা রিভিউ কমিটি করেছি। একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের দাবিগুলো আমাদের কাছে এলে আমরা সেটার সমাধান করব। কিন্তু যারা সেখানে বহিরাগত এবং যাদের এর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই; ঝুট ব্যবসা দখল করাকে কেন্দ্র করে যারা অস্থিরতা ছড়াচ্ছে বা উসকানি দিচ্ছে, তাদের ব্যাপারে সরকার ইতোমধ্যেই কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

বিচারিক প্রক্রিয়া শুরুর পর শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিয়ে আলোচনা : ভারত থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিচারের স্বার্থে, নির্যাতন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং সর্বোপরি একটি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়ায় তাকে  (শেখ হাসিনা) থাকতে হবে। কারণ দায়-দায়িত্বের একটা ব্যাপার আছে। এখন যে প্রত্যাবর্তনের কথা বলা হয়েছে, এটি কোন প্রক্রিয়ায় হবে, দুই দেশের মধ্যে কীভাবে কথা হবে, সেগুলো পরের ব্যাপার। যখন আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে তখন প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি দেখা হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, নেতিবাচক বিভিন্ন মন্তব্য আছে। গত ১৫ বছর আমরা এ দেশেই ছিলাম। বাস্তবতা আমরা সবাই জানি। ভারত আমাদের পাশের দেশ। আমাদের নীতি হচ্ছে সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা, তবে সেটা হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। এখানে কোনো নতজানু নীতির বিষয় নেই। যেটা আমাদের অধিকার, যেটা আমাদের প্রাপ্য, যেটা আমাদের বিবেচনায় সঠিক- সেই কথাগুলো যেই চ্যানেলে বলা দরকার, তা সে কূটনৈতিক হোক, তা সেটা রাজনৈতিক হোক, আন্তর্জাতিক হোক- আমরা সেগুলো বলব।

জলবায়ু ফান্ডের টাকা ২০৩৮ সালের আগে দিতে পারবে না পদ্মা ব্যাংক : বেসরকারি ব্যাংকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের তহবিল রাখার পর সেটি ফেরত পাওয়ার বিষয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা নিয়েও উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি জানান, তাঁর মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু তহবিলের অর্থ সাবেক ফারমার্স ব্যাংক, যেটি বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক নামে কার্যক্রম চালাচ্ছে, সেই ব্যাংকটিতে রাখা হয়েছিল। সুদে-আসলে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭৩ কোটি ৮১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫৩ টাকা। পদ্মা ব্যাংক জানিয়েছে, ২০৩৮ সাল লাগবে এই টাকা ফেরত দিতে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বেসরকারি ব্যাংকে এই টাকা কী বিবেচনায় রাখা হয়েছে সেটি আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থা বেসরকারি ব্যাংকে রাখা আমানত তুলতে সমস্যায় পড়ছে, সেই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও আমানতগ্রহণকারী ব্যাংকের সঙ্গে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রোডম্যাপ তৈরি করে দেবে, যাতে এই সরকারি টাকা আমরা যে কাজে নিয়েছিলাম, সেই কাজের জন্য ফেরত পাই।

সর্বশেষ খবর