দেশের রপ্তানি আয়ের বড় উৎস পোশাক কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। তাদের শ্রমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়লেও শ্রমিক-সুবিধা পাচ্ছেন না তারা। শ্রম আইনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও দেশের বেশির ভাগ পোশাক কারখানায় নেই ট্রেড ইউনিয়ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানিমুখী খাত বলে পরিচিতি পাওয়ায় এ খাতে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠায় মালিকপক্ষের অনীহা কাজ করছে। মালিকদের অসহযোগিতার কারণে তিন দশকের বেশি সময় ধরে দেশের এই বৃহৎ শিল্প খাতে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলা যায়নি। দেশের ৯০ শতাংশের বেশি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই। উন্নত বিশ্বে শিল্পের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে গুণগত মানের দিকেও নজর দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে শিল্পের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও শ্রমিকদের গুণগত মান বাড়েনি। এখনো দেশের ৮০ শতাংশের বেশি কারখানার শ্রমিকরা লিখিত নিয়োগপত্র পান না। রানা প্লাজা ধসের পর থেকে দেশের তৈরি পোশাক খাতে আন্তর্জাতিক মহলে বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়। ২০১৩ সালের ওই ঘটনার পর কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ উন্নত করার সঙ্গে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ওপর চাপ দেয় স্থানীয় শ্রমিক সংগঠন ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো। মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকেও কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়নের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর সরকার উদ্যোগ নিলে মালিকপক্ষ ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিষয়ে রাজি হয়। এরপর এক দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো দেশের ৯০ ভাগ কারখানায় কার্যত কোনো ট্রেড ইউনিয়ন নেই। ট্রেড ইউনিয়ন না থাকায় প্রায়ই দেশের এই বড় শ্রম খাতে কিছুদিন পরপরই শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। মালিকপক্ষের অসহযোগিতা, নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ না করা, চাকরিচ্যুতি নিয়ে শ্রমিক বিদ্রোহের কারণে দেশ ও দেশের বাইরে গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে ওঠে। শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত হয়ে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটায়। এর নেতিবাচক পরিণতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। জানতে চাইলে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা রুহুল আমিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইনে কোনো বাধা না থাকলেও তৈরি পোশাক শিল্পে তিন দশক পরও কোনো ট্রেড ইউনিয়ন নেই। যা আছে তার বেশির ভাগই মালিকদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। শ্রমিক নেত্রী মোশরেফা মিশু বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার মালিকপক্ষ স্বীকার করতে চায় না। ট্রেড ইউনিয়ন না থাকায় এখন যে পদ্ধতিতে শ্রমিকরা দাবি আদায় করতে রাস্তায় নেমে আসে সেটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার না দিলে এ বিশৃঙ্খলা ঠেকানো যাবে না। সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে সব কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের। মালিকরাই মূলত ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বাধা দিচ্ছেন। সরকার সেটি ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। তিনি বলেন- কারখানার অনিরাপদ পরিবেশের বিষয়টি ইউনিয়ন তুলে ধরতে পারত। আমরা সরকারের কাছে শ্রমিকদের চাকরি নিরাপত্তা, বেতন ভাতাসহ ১৫ দফা দাবি দিয়েছি। এগুলো বাস্তবায়ন না করলে দেশের অর্থনীতি ভালো হবে না।