ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের দুই মাস আজ। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ঐতিহাসিক এ পট পরিবর্তনের দগদগে স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের মানুষকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার ১ হাজারের বেশি মানুষ। চোখের আলো নিভে গেছে ৪০০ জনের। শরীরে বুলেটের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন শত শত মানুষ।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জুলাইয়ের গোড়ায় শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মধ্য জুলাইয়ে এসে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় রূপ নেয় গণবিস্ফোরণে। সরকারের অত্যাচার-নিপীড়নের সঙ্গে যোগ হয় স্বৈরাচারের আজ্ঞাবহ কিছু অতিউৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তার মানবাধিকারবিরোধী নৃশংসতা। নির্বিচার গণহত্যা নিশ্চিত করে শেখ হাসিনা সরকারের পতন।
আওয়ামী লীগ সরকারের দমনপীড়নের সামনে রাজপথে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। তরুণ, যুবা, গৃহিণী, অভিভাবক সবাই স্বৈরাচরের রাহুমুক্ত হতে একজোট হয়েছিলেন রাজপথে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে উঠে আসে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা।
এ গণদাবি সরকারের ভিত নাড়িয়ে দেয়। সরকারের পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের গুলি, হত্যার বীভৎসতায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন রূপ নেয় অভ্যুত্থানে। প্রবল জনরোষের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ওই দিন দুপুরে সামরিক হেলিকপ্টারে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতের নয়াদিল্লিতে গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। এরপর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার।
ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে গিয়ে নির্বিচার গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্য, উপদেষ্টা, আওয়ামী লীগের অনেক এমপির বিরুদ্ধে নিহতদের পরিবার হত্যা মামলা দায়ের করছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে শতাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। শেখ হাসিনার পরিবারের অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যেই বিগত সরকারের মন্ত্রী, এমপিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। রিমান্ডে বেরিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ক্ষমতাধর এসব ব্যক্তির দমনপীড়ন, লুটপাট, দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য। এদিকে বিচারের আওতা থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী, এমপি বিদেশে পালিয়ে গেছেন। দেশে থাকা মন্ত্রী, এমপিরাও রয়েছেন আত্মগোপনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার হচ্ছেন তাঁরা।
শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকা কূটনৈতিক পাসপোর্টও বাতিল করে দিয়েছে সরকার। এ ধরনের পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়া ভারতে ৪৫ দিন বৈধভাবে থাকতে পারেন। কিন্তু শেখ হাসিনা দুই মাস ধরে ভারতে অবস্থান করছেন। কূটনৈতিক পাসপোর্টে তাঁর বৈধভাবে অবস্থানের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এখন তিনি দেশটিতে কীভাবে অবস্থান করছেন তা পরিষ্কার নয়। জল্পনা উঠেছে-অচিরেই ভারত ছাড়তে হবে শেখ হাসিনাকে। তবে ভারত ছেড়ে কোথায় যাবেন, তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
