অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শেষে দু-তিন দিনের মধ্যেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে। এরপর মাসখানেকের মধ্যেই ফুল স্কেলে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হবে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এর আগে প্রধার বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক উপলক্ষে বেলা ৩টার দিকে তিনি সুপ্রিম কোর্টে আসেন। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠকের সময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন, বিচারপতিদের পদত্যাগের দাবিসহ বিচার বিভাগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠক শেষে আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে এর আগে আমার ফর্মাল কোনো সাক্ষাৎ হয়নি, সে জন্য আসা। বিচার বিভাগের যেসব সমস্যা হচ্ছে, আইন মন্ত্রণালয় এবং সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে যেসব ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার প্রয়োজন, সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু কিছু বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে অবগত করার জন্য বলা হয়েছে। আমরা বলেছি, আমরাও অবগত আছি। উনারাও অবগত রয়েছেন। আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, এটা (বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ) আমাদের সিদ্ধান্ত বা আমাদের দাবি না। যারা আন্দোলন করেছিল, জুলাই গণবিপ্লব করেছিল, তাদের দাবি। ছাত্রজনতা মনে করেছে এসব বিচারপতি গণ আন্দোলনের প্রতিপক্ষ ফ্যাসিস্ট সরকারের হয়ে দিনের পর দিন কাজ করেছে এবং তাদের শক্তিশালী করেছে। এ জন্য ছাত্র-জনতা তাদের পদত্যাগের দাবি তুলেছে।
আমরা ছাত্র-জনতার ইচ্ছার ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চিন্তাই করি না। যাদের (বিচারপতি) বিষয়ে বলা হচ্ছে, এখন তারা ভাববেন, তারা কী করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, বিচারপতিদের বিষয়ে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে অনেক ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ সুপ্রিম কোর্টের রয়েছে। এখন উনারা কী ব্যবস্থা নেবেন, উনারাই বিবেচনা করবেন। আমরা বলে দিতে পারি না।
আইন উপদেষ্টা বলেন, হাই কোর্টে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরুর বিষয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে। আমরা যখন ট্রাইব্যুনালে বিচারক চাইতাম, তখন সুপ্রিম কোর্ট থেকে আমাদের বলা হতো- বিচারক সংকট রয়েছে। এখন আশা করি এই সংকটটা অনেকটা নিরসন হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। আমাদের প্রসিকিউশন টিম রয়েছে। তারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আমি যতটুকু জানি, প্রসিকিউশন টিম বিশ্বাসযোগ্য মামলা উত্থাপনের আলামত, তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা বিচার করব, এখানে কে উপস্থিত, কে অনুপস্থিত সেটা দেখার বিষয় না। কারণ আমাদের আইনে অনুপস্থিত ব্যক্তির বিচার করার বিধান রয়েছে। অনুপস্থিত ব্যক্তিরা যেসব দেশে গেছে, তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যও আমরা সেসব দেশে লিখতে পারি। আমাদের সব অপশন খোলা আছে। বিচার করার লক্ষ্যে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আশা করি, ফুল স্কেলে বিচার মাসখানেকের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে। কবে নাগাদ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ছুটি না থাকলে তিন-চার দিনের মধ্যেই হয়ে যেত। এখন সুপ্রিম কোর্ট খোলার পরেই তিন-চার দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা কোথায় আছেন- প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, শেখ হাসিনা কোথায় আছেন, এখন সেটা নিয়ে ভাবছি না। তারা যে অপরাধ করেছেন, তার বিচার নিয়ে কাজ করছি। বিচারের কোনো পর্যায়ে গিয়ে যদি শেখ হাসিনার উপস্থিতির প্রয়োজন হয় তখন তার খোঁজ নেব।
আইন না করে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, আইন করে দেশে নির্বাচন কমিশনও গঠন হয়েছিল। সে নির্বাচন কমিশন কি দেশে ভালো নির্বাচন দিয়েছিল? আইনের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উদ্দেশ্য কী, সেটা ঠিক করা। আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, গত ১৫ বছরের চেয়ে এবারের নিয়োগটা ভালো হয়েছে। তুলনা করলে আপনারাই বুঝতে পারবেন। তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা আইন করব। আইন করার জন্য কমিশন করা হয়েছে। কমিশনের রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই নিয়োগটা জরুরি বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে জানান আইন উপদেষ্টা।