আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন। উপদেষ্টা বলেন, তার এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উনি যদি তার বক্তব্যে অটল থাকেন তাহলে বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদে যাবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ নজরুল বলেন, রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার। উনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ তিনি নিজেই গত ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। তাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তার কাছে নেই বলে রাষ্ট্রপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা তার স্ববিরোধী বক্তব্য। ড. আসিফ নজরুল বলেন, গত ৫ আগস্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে মতামত বা রেফারেন্স জানতে চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবং আপিল বিভাগের অন্য সব বিচারপতি মিলে একটা মতামত দেন। আসিফ নজরুল বলেন, এই রেফারেন্সটিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির স্বাক্ষর রয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, এই যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা যায়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে একটি নোট মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতি এই অভিমতটা দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এরপর তিনি নিজে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছেন। আসিফ নজরুল বলেন, গত ৫ আগস্ট নিজের মুখের ভাষণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং গ্রহণ করেছেন বলে জানান রাষ্ট্রপতি। এরপর একের পর এক কার্যাবলির মধ্য দিয়ে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত উনি পুরো জাতির কাছে বিভিন্নভাবে বারবার নিশ্চিত করেছেন এবং সুনিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং গ্রহণ করেছেন। আজ যদি প্রায় আড়াই মাস পর বলেন পদত্যাগপত্র দেননি, তাহলে এটা এক ধরনের স্ববিরোধিতা হয়, শপথ লঙ্ঘন হয় এবং এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না সে সম্পর্কে প্রশ্ন আসে। পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রের কাছে দেখাতে পারবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে রাষ্ট্রপতির কাছেই পদত্যাগ করেন। সেটা রাষ্ট্রপতির দপ্তরেই থাকার কথা। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এটা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। রাষ্ট্রপতির এ ধরনের কথা বলার নেপথ্যে কোনো কারণ আছে বলে আপনি মনে করেন কি না– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এখানে অনুমান করতে আসিনি এবং অনুমানের জায়গায় নেই। তবে এটা নিয়ে সমাজে প্রশ্ন আসতে পারে। আজ যখন দেখি পতিত ফ্যাসিস্ট মাথা চাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ানোর বিভিন্ন আয়োজন করছে। তখন হঠাৎ করে উনি আড়াই মাস পর এ কথা বললেন কেন? এটা নিয়ে সমাজে প্রশ্ন আসতে পারে, সেটা আসাটা খুব স্বাভাবিক।