কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইউনিফর্ম পরিধানে অনীহায় খেপেছে কারা সদর দপ্তর। সিদ্ধান্ত নিয়েছে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের। এরই মধ্যে ১৮ নভেম্বর দেশের ৬৮টি কারাগারে কড়া নির্দেশনা সংবলিত চিঠি পাঠিয়েছে কারা সদর দপ্তর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউনিফর্ম না পরে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকেই নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। কর্তব্যরত অবস্থায় নিজেদের নজরদারির বাইরে রাখতেই তারা এমনটি করছেন বলে উঠে এসেছে একাধিক সংস্থার প্রতিবেদনে। কারা অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ঢাকা) মো. জাহাঙ্গীর কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ জেলের ইউনিফর্মধারী প্রতিটি সদস্যের জন্যই পোশাক নীতিমালা অনুসরণ বাধ্যতামূলক। এর কিছু ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে কারণেই কারা সদর দপ্তর থেকে পোশাক নীতিমালা-২০১৬ যথাযথভাবে অনুসরণের জন্য তাগিদপত্র প্রদান করা হয়েছে। সে অনুসারে ঢাকা বিভাগে কর্মরত বাংলাদেশ জেলের প্রতিটি সদস্যকে তা কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। জানা গেছে, ১৮ নভেম্বর কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত ‘বাংলাদেশ জেল পোশাক নীতিমালা-২০১৬ অনুযায়ী ইউনিফর্ম পরিধান-সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ কারা উপমহাপরিদর্শক (সব সদর দপ্তর), কমান্ড্যান্ট কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রাজশাহী, সিনিয়র জেল সুপার, জেলারসহ (সব জেলা কারাগার) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ওই বার্তায় পোশাক পরিধানের নির্দেশনা মানার পাশাপাশি কিছু বিষয় অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কারা সূত্র বলছে, গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারসহ দেশের ৬৮ কারাগারে (নরসিংদী ছাড়া) কর্তব্যরত কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেকেই জেল পোশাক পরে ডিউটি করছেন না। এর আগেও ইউনিফর্ম পরার ব্যাপারে কারা সদরের কড়াকড়ি আরোপ করার পরও তাতে থোড়াই কেয়ার করছিলেন তারা।
কারা সদর দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনার অধীনস্থ কারাগারগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সূত্রস্থ স্মারকের আলোকে পোশাক পরিধানের নির্দেশনা দেওয়ার পরও তা যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না। যা শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য হিসেবে কাম্য নয়। বাংলাদেশ জেল পোশাক নীতিমালা-২০১৬ পালনের পাশাপাশি গার্ডিং স্টাফদের শার্ট প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় ডিএমএস বুট পরিধানসহ পাঁচটি নিয়ম অনুসরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।
পোশাক পরার নিয়ম অনুসরণের নির্দেশে আরও রয়েছে, বয়স ৪০ বছরের বেশি মহিলা গার্ডিং স্টাফদের গাঢ় সবুজ (ডিপ গ্রিন) শাড়ির সঙ্গে বরাদ্দকৃত শার্ট পরিধান করতে হবে। শাড়ি পরা অবস্থায় লেডিস স্যু পরতে হবে।
বয়স অনূর্ধ্ব ৪০ বছর পর্যন্ত মহিলা গার্ডিং স্টাফদের শার্ট প্যান্ট ও ডিএমএস বুট পরিধান করতে হবে। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা মহিলা গার্ডিং স্টাফদের গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ির সঙ্গে (ডিপ গ্রিন) বরাদ্দকৃত শার্ট পরতে হবে। একই সঙ্গে ‘শোল্ডার লেটার’ ও ‘ব্যাজেজ অব র্যাংক’ কারা কর্মকর্তা ও গার্ডিং স্টাফদের বরাদ্দ করা পোশাকের শার্টের উভয় পাশে কাঁধে সোনালি রঙের (ধাতব পদার্থ দ্বারা নির্মিত) পরা নিশ্চিত করার কথা চিঠিতে বলা হয়েছে। গতকাল কারা সদর দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আগের সরকারের সময়ে অনেক কারাগারের জেল সুপাররা কারাগারের দেওয়া পোশাক পরতেন না। এরই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। তিনি আরও বলেন, কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবশ্যই শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। এ ব্যাপারে এখন থেকে আর ছাড় দেবে না কারা সদর।