বাংলাদেশ সরকার ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করতে চায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্য, বিদ্যুতের দাম অনেকাংশে কমিয়ে আনা, যদি না আদালত শেষমেশ এই চুক্তি বাতিলের নির্দেশ দেন। গত রবিবার বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে এ কথা জানান।
সম্প্রতি আদানি গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে ভারতে ২৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে। সেই সঙ্গে ভারতের এক রাজ্য সরকার আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে সই হওয়া বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা করছে। ফ্রান্সের টোটাল এনার্জিও আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ স্থগিত করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০১৭ সালে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি করে। ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গত বছর উৎপাদনে আসে। সেখান থেকে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ হচ্ছে। তবে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার উচ্চ দামের কারণে চুক্তি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের এক আইনজীবীর আবেদনের ভিত্তিতে হাই কোর্ট সম্প্রতি আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তি তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত শেষ হবে এবং তখন আদালত চূড়ান্ত রায় দেবেন। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান রয়টার্সকে বলেছেন, ‘চুক্তিতে অসংগতি থাকলে আদানির সঙ্গে পুনরায় আলোচনা হবে। শুধু দুর্নীতি এবং ঘুষের মতো অনিয়ম হয়ে থাকলে চুক্তি বাতিল হবে।’ আদালতের নির্দেশে যে তদন্ত চলছে তার ভিত্তিতেই এটি হবে। তিনি বলেন, কিছু ইস্যু আছে, যেমন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভারতে যে করছাড় পাচ্ছে এর উপকার পাচ্ছে না বাংলাদেশ। বিষয়টি ইতোমধ্যে আদানি গ্রুপকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চুক্তি পুনর্বিবেচনার একাধিক কারণের মধ্যে এটিও একটি হতে পারে।
তবে গতকাল রয়টার্সের অপর এক প্রতিবেদনে আদানি পাওয়ার কর্তৃপক্ষ জানান যে, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি পুনর্বিবেচনা করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত পাননি।
এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার আদানির চুক্তি ও অন্যান্য ছয়টি বিদ্যুৎ চুক্তি পর্যালোচনা করতে পৃথক কমিটি গঠন করেছে। আন্তর্জাতিক আলোচনা ও সালিশিতে গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে এটা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আদানি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ধরেছে ১৪ টাকা ০২ পয়সা। যেখানে দেশে বিদ্যুতের গড় দাম ৮ টাকা ৭৭ পয়সা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আদানি পাওয়ার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ধরেছে ১২ টাকা। রয়টার্স বলছে, ভারতের অন্যান্য বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের দামের চেয়ে এটা ২৭ শতাংশ বেশি এবং সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ইউনিট প্রতি ৮ টাকা ৯৫ পয়সা।