সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সরকারের অবস্থান বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে ব্যাখ্যা করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ব্রিফিংয়ে ঢাকায় নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও আবাসিক প্রতিনিধিদের কাছে এ ব্যাখ্যা দেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, সর্বশক্তি দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, পাকিস্তান, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশি মিশনগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নানান ইস্যুতে সরকারের কাছে জানতে চান কূটনীতিকরা। তবে ব্রিফিং শেষে কথা বলেননি কোনো রাষ্ট্রদূত। ব্রিফিংয়ের তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, আমরা সবাইকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করছি। তবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। এর বাইরেও অনেক মিডিয়া ভারতীয় গণমাধ্যমকে উপজীব্য করে অপতথ্য প্রচার করছে। আমরা বলতে চাই, সব সরকারের আমলেই বছরে দুই-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। সরকারের কাজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা, আমরা সেটি করেছি। তবে দেশ এবং দেশের বাইরে এ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রিটেনের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের একপেশে প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে। প্রতিবেদন তৈরিতে সেখানে অবস্থানরত বিশেষ গোষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে। যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগপন্থি এমপিদের সংখ্যা বেশি। তারা প্রতিবেদনকে প্রভাবিত করেছে। তারা আমাদের দূতাবাসকেও এ বিষয়ে কিছু জানায়নি। তিনি বলেন, কূটনীতিকদের ব্রিফকালে ইসকন নেতা ও সনাতন নাগরিক মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কোন পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার এবং কেন তার জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে, সেই বিষয়গুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। সরকারের বর্তমান অবস্থান আমরা তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি। নিয়ম অনুযায়ী এটা অবশ্যই তারা তাদের দেশে রিপোর্ট করবেন। এ ছাড়াও কূটনীতিকদের কিছু কিছু বিষয়ে প্রশ্ন ছিল, সেগুলোরও উত্তর দেওয়া হয়েছে। আলোচনায় তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে আমরা মনে করছি। তৌহিদ হোসেন বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। সাম্প্রদায়িক কোনো অপতৎপরতা বরদাশত করবে না। আমরা হিন্দু-মুসলিম কোনো ভেদ করতে চাই না। কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
মমতা ব্যানার্জির মন্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, উনি এই বক্তব্য কেন দিলেন, তা বুঝতে পারছি না। তবে এটি তার জন্য রাজনৈতিকভাবে সুষ্ঠু পদক্ষেপ হবে না। রাজনৈতিক বিতর্ক সবসময় রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা উচিত।
এই বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তার অবস্থানের জন্য সহায়ক হবে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগের সম্পর্ক আর পরের সম্পর্ক এক না। সম্পর্কে যে সমস্যা আছে, সেটা আমরা স্বীকার করি। একটা সমস্যা স্বীকার করলে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা যায়। আমরা ভারতের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থ ঠিক রেখে সুসম্পর্ক রাখতে চাই।