বিএনপি সংস্কারবিরোধী-এটা একটি মহলের পরিকল্পিত অপপ্রচার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়ে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ, কিন্তু একটি মহল, একটি চক্র অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী বলে প্রচার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। রবিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে মিডিয়ার কিছু অংশ এবং কিছু ব্যক্তিত্ব বিএনপির সংস্কার সম্পর্কে বিভিন্ন রকম কথা বলছে, যেগুলো সঠিক নয়। বিএনপির কমিটমেন্ট টু রিফর্মস, এটা নিয়ে কোশ্চেন করার কোনো সুযোগ নেই।’ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্র দেখছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘সে কথা আমি এই মুহূর্তে বলব না। তবে নির্বাচনকে যারা বিলম্বিত করতে চায়, তারা নিশ্চয়ই গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি নয়, তারা নিশ্চয়ই জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পক্ষের শক্তি নয়।’ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহ ও প্রত্যাশা যেমন অনেক, তেমনি হতাশা ও উৎকণ্ঠাও রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপি কোনো বিপ্লবের মাধ্যমে বা অন্য কোনো কিছুর মাধ্যমে নয়; নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চায় বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার জন্য বিএনপি ১৫ বছর লড়াই-সংগ্রাম করেছে। এর প্রাথমিক বিষয় ভোটের অধিকার, বাক্স্বাধীনতা, ন্যায়বিচারের অধিকার প্রতিষ্ঠা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহ ও প্রত্যাশা যেমন অনেক, তেমনি হতাশা ও উৎকণ্ঠাও রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়ে হলেও একমত হয়ে কমিশনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে সহযোগিতা করেছে বিএনপি। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পর সংস্কার কমিশনগুলো যেসব প্রস্তাব পেশ করেছে, তার বিপরীত কিংবা নতুন নতুন প্রস্তাব উত্থাপন এবং তা নিয়ে অনেক সময় অচলাবস্থা সৃষ্টির কারণে সংস্কার কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।
বিএনপি সংস্কারের বিষয়ে আন্তরিক এটা বলতে গিয়ে মির্জা ফখরুল ২০১৬ সালে বিএনপি ঘোষিত ভিশন ২০৩০, ২০২০ ও ২০২২ সালে ২৭ দফা এবং তারপরে অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা সংস্কারের কর্মসূচির কথা জানান। একই সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে সংস্কারপ্রক্রিয়ায়ও বিএনপি সহযোগিতা করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১৮৭টি প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত, ৫টিতে আংশিক একমত ও ৫টিতে ভিন্ন মত দিয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
নির্বাচন যত দেরি হবে বাংলাদেশ তত পিছিয়ে যাবে : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন যত দেরি হবে, বাংলাদেশ তত পিছিয়ে যাবে। বিনিয়োগ আসবে না, চাকরির সুযোগ তৈরি হবে না, জুডিশিয়াল সিস্টেম, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়বে। এজন্য দরকার নির্বাচিত সরকার। নির্বাচিত সরকারের চাইতে শক্তিশালী কোনো সরকার হতে পারে না।
গতকাল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত এবং দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিলপূর্ব আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক। সিলেট মহানগরের পাঠানটুলায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে এ মাহফিল হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের সভাপতিত্বে এবং মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী ও জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকীর পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা হঠাৎ করে পালাননি। বহুদিনের সংগ্রাম, বহু মানুষের ত্যাগ, বহু মানুষের রক্তের বিনিময়ে দেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। এখন আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেখানে মানুষ ভোট দেবে। কথা বলার সুযোগ পাবে। তরুণরা কাজের, লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। নারীরা নিরাপত্তা পাবে। চিকিৎসার সুযোগ পাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, হাবিবুর রহমান, আরিফুল হক চৌধুরী, তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী, মুহিদুর রহমান, ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন ও মিফতাহ সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম, কেন্দ্রীয় সহক্ষুদ্র ও ঋণবিষয়ক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক, সদস্য নিপুণ রায়, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট হাদীয়া চৌধুরী মুন্নী, মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম।