৮ সংখ্যাটি বিশেষভাবে শুভ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষেত্রে। সংখ্যাতাত্ত্বিকদের দাবি, আর এই বিষয়টি সম্পর্কে জানেন স্বয়ং মোদি নিজেও। সেজন্যই তার রাজনৈতিক কাজকর্মে ৮ সংখ্যাটি কারণে বিশেষ তাৎপর্যও বহন করে।
গত ৮ নভেম্বর রাত ৮ টায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেন। দেশে সঞ্চিত কালো টাকা ও জাল টাকার ভাণ্ডারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করার লক্ষ্যে বাতিল করে দেন পুরনো ৫০০ ও ১০০০-এর নোট। কিন্তু কেন এই নির্দিষ্ট তারিখে ওই নির্দিষ্ট সময়েই জাতীয় টেলিভিশনে এই ঘোষণা করলেন মোদি তা ভারতের সাধারণ দেশবাসীর কাছে বিষয়টি কৌতুহলের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিন্তু নিউমেরোলজিস্ট বা সংখ্যাতাত্ত্বিকরা মোদির এই ঘোষণার দিন-ক্ষণ নির্বাচনের পেছনে অন্যরকম যোগসূত্র দেখছেন। আমেরিকার বিখ্যাত সংখ্যাতাত্ত্বিক পল সাডোস্কি মোদির এই পদক্ষেপের ভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তার বক্তব্য, মোদীর জন্মসংখ্যা ৮। কারণ তার জন্মতারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮০।
১ এবং ৭ সংখ্যা দু’টির যোগফল ৮। তাছাড়া ইংরেজিতে নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) নামটিতে মোট ১২টি অক্ষর রয়েছে। বর্ণমালায় অবস্থানের ভিত্তিতে প্রত্যেকটি অক্ষরের যোগফল ৬২। কীরকম? দেখে নিন—
N=১৪>১+৪=৫, A=১, R=১৮>১+৮=৯, E=৫, N=৫, D=৪, R=৯, A=১, M=১৩>১+৩=৪, O=১৫>১+৫=৬, D=৪, I=৯। যার যোগফল ৬২।
এবার এই ৬২-র সংখ্যা দু’টিকে যোগ করলে যোগফল হয় ৮ (৬+২)। কাজেই ৮ সংখ্যাটি বিশেষভাবে শুভ নরেন্দ্র মোদীর ক্ষেত্রে। আসুন, দেখে নেওয়া যাক কথাটির পেছোণেড় যুক্তি—
১. সংখ্যাতত্ত্ব অনুসারে ১৭ আর ২৬ সংখ্যা দু’টিও ৮ সংখ্যাটিকেই চিহ্নিত করে। কারণ ১ ও ৭, এবং ২ ও ৬-এর যোগফলও ৮। সেই কারণে দেখা যাবে, নরেন্দ্র মোদি তার রাজনৈতিক জীবনের বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই নিয়েছেন এই দু’টি তারিখে।
২. প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদি শপথ নেন ২৬ মে ২০১৪ তারিখে।
৩. মোদি চতুর্থবারের জন্য গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন ২৬ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে।
৪. লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রচার শুরু করেছিলেন মোদি ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ।
৫. প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন যে রাস্তায় অবস্থিত, সেই রাস্তার নাম রেস কোর্স রোড থেকে বদলে মোদি করেন লোক কল্যাণ মার্গ। ক্যালাডিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ‘লোক কল্যাণ মার্গ’ নামটির সংখ্যাতাত্ত্বিক মূল্য ৮। প্রধানমন্ত্রীর অফিসের নম্বর অবশ্য ৭। কিন্তু সেই নম্বর তো আর বদলানো সম্ভব নয়। অগত্যা রাস্তার নাম বদল— এমনটাই ব্যাখ্যা সংখ্যাতাত্ত্বিকদের।
৬. মোদি গরিবদের সাহায্যার্থে স্বাবলম্বন অভিযান শুরু করেন ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে।
৭. ২০১৫ সালে গুজরাটে প্রবাসী ভারতীয় দিবস উদ্বোধন করেছিলেন মোদি। উদ্বোধনের তারিখটা ছিল ৮ জানুয়ারি।
৮. মোদির উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা তার যাত্রা শুরু করে ৮ এপ্রিল ২০১৫-এ।
৯. সার্ক-এর উদ্বোধনী ভাষণ দিয়েছিলেন মোদি ২৬ নভেম্বর ২০১৪-এ।
১০. কৃষকদের জন্য দূরদর্শন কিষাণ উদ্বোধন করেছিলেন মোদি ২০১৫ সালের ২৬ মে।
১১. সবথেকে বড় কথা, ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র যাত্রা ঘোষণা করেন মোদি ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
এই তালিকাতেই সর্বশেষ সংযোজন নোট বাতিলের ঘোষণা। শুধু ৮ তারিখে নয়, রাত ৮ টার সময়েই এই নোট বাতিলের ঘোষণাটি করেন মোদী। এই ৮.১১.২০১৬ তারিখটিও সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
কারণ সাডোস্কির ব্যাখ্যা, মোদির কাজকর্ম ও মানসিকতাকেও সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। যাদের জন্মসংখ্যা ৮ হয়, তারা সাধারণত উচ্চাশী এবং প্রত্যয়ী হন। অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নির্ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতার অধিকারী হন তারা। মোদীর কাজকর্মে এই মানসিকতারই প্রতিফলন ঘটেছে।
মোদি নিজে অবশ্য তার সাক্ষাৎকারে জোরের সঙ্গেই একাধিকবার বলেছেন যে, তিনি কোনও রকম জ্যোতিষ বা সংখ্যাতত্ত্বে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু সংখ্যাতাত্ত্বিকরা তথ্যপ্রমাণ সহ মোদীর এই দাবিকে ভুল প্রমাণ করতে চাইছেন। তারা যেসব প্রমাণ তুলে ধরছেন, তার কিছু গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু একথাও সত্য যে, মোদীর রাজনৈতিক জীবন বিশ্লেষণ করলে নিশ্চয়ই দেখা যাবে, বহু সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপই এমন সময়ে বা তারিখে নিয়েছেন মোদী, যার সঙ্গে ৮-এর কোনও যোগ নেই।
বিডি-প্রতিদিন/২৭ নভেম্বর, ২০১৬/তাফসীর-১০