এক সময়কার সিআইএ গুপ্তচর আন্তনিও ভেসিয়ানা তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে একটি বই লিখেছেন। আমেরিকার ‘নিউজউইক’ পত্রিকায় সাংবাদিক জেফারসন মরলি যতটা তুলে ধরেছেন তা থেকেই বোঝা যায়, আগামী দিনে ভেসিয়ানার এই বই চাঞ্চল্য ছড়াবে। বিশেষ করে, কেনেডি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে।
আন্তনিও ভেসিয়ানার এই স্মৃতিকথার নাম ‘ট্রেইনড টু কিল: দ্য ইনসাইড স্টোরি অব সিআইএ প্লটস এগেনস্ট কাস্ত্রো, কেনেডি অ্যান্ড চে’। বইটি লিখতে তাঁকে সাহায্য করেছেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক কার্লস হ্যারিসন। সিআইএ-র হয়ে কাজ করার সময় কিউবার বাসিন্দা আন্তনিও ভেসিয়ানার কোডনেম ছিল অ্যামশেল-ওয়ান। কাস্ত্রোকে হত্যা করার চেষ্টা সহ হাভানায় একাধিক অন্তর্ঘাতেও জড়িত ছিলেন তিনি।
অন্তর্ঘাতের জন্যই ১৯৬০ সালে তিনি কিউবার বিপ্লবী সরকারে যোগ দেন। তখন কিউবার অর্থমন্ত্রী চে গুয়েভার। চে-র মন্ত্রণালয়ে কাজ করার সময় ভেসিয়ানা সেখান থেকে টাকা সরান এবং সেই তহবিল থেকেই কিউবায় সিআইএ-র বিভিন্ন অন্তর্ঘাতে মদত জোগান। যদিও ভেসিয়ানার নিজের ভাষাতেই, তাঁকে দেখলে মোটেও সিনেমাটিক স্পাই বলে মনে হত না। কেউ তাই পাত্তাও দিত না।
একটা হাড়গিলে, হাঁফানি রোগীকে নিয়ে কারই বা মাথাব্যথা থাকবে? কিন্তু সেই ভেসিয়ানার উপর ভর করেই সিআইএ কাস্ত্রোর কিউবা-র বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একের পর এক ছক কষেছিল। এমনকী, কাস্ত্রোকে মেরে ফেলার ভারও ভেসিয়ানাকে দেওয়া হয়েছিল। হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল কালাশনিকভ। কিন্তু কোনও ষড়যন্ত্রই যে তেমনভাবে কাজে লাগেনি, তার প্রমাণ— দীর্ঘায়ু কাস্ত্রো অবশেষে জরাগ্রস্ত হয়ে হালে দেহ রেখেছেন। তবু, ভুয়া খবর ও উসকানি ছড়িয়ে যে সেই সময় বহু কিউবানকে দেশ ত্যাগ করে আমেরিকায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য ভেসিয়ানাকে কাজে লাগানো হয়েছিল, সে কথা ‘অ্যামশেল-ওয়ান’ নিজের স্মৃতিকথাতেই স্বীকার করেছেন।
তবে আন্তনিও ভেসিয়ানা-র স্মৃতিকথার সব থেকে যেটা চাঞ্চল্যকর দিক সেটা হল, প্রেসিডেন্ট কেনেডির হত্যাকাণ্ডের পিছনে যে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল সে কথা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। ভেসিয়ানা লিখেছেন, কিউবা নিয়ে কেনেডি-র নমনীয়তায় সিআইএ সহ আমেরিকান ইন্টেলিজেন্সের অনেকেই ক্ষুব্ধ ছিল। ভেসিয়ানা নিজে তো ছিলেনই। এ রকমই একটা সময়ে ডালাসের সর্বোচ্চ বহুতল সাউথল্যান্ড সেন্টারে সিআইএ-র সহকর্মী ‘মরিস বিশপ’ একটি লোকের সঙ্গে তাঁকে আলাপ করিয়ে দেন। লোকটি এলোমেলো টাইপের ছিল। তাই তার সঙ্গে আলাপ করেও পাত্তা দেননি ভেসিয়ানা। কিন্তু সেই ঘটনার দুই মাস পরে, ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর কেনেডি হত্যার পর টিভি-তে দেখতে পেলেন, সেই এলোমেলো লোকটিই প্রেসিডেন্টের হত্যাকারী— লি হার্ভে অসওয়াল্ড! যে সিআইএ সহকর্মীর কোডনেম ছিল ‘মরিস বিশপ’, পরবর্তীকালে তিনি সিআইএ-র একজন পদস্থ কর্তা হন— ডেভিড অ্যাটলি ফিলিপস। সিআইএ-র পশ্চিম গোলার্ধের দায়ভার ছিল তাঁর উপর। তিনি অবসর নেন ১৯৭৫ সালে।
আন্তনিও ভেসিয়ানার দাবি, ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বরের আগে পর্যন্ত শুধু ডেভিড ফিলিপস অ্যাটলি নন, অন্তত ছ’জন পদস্থ সিআইএ কর্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল লি হার্ভে অসওয়াল্ডের। অর্থাৎ, ভেসিয়ানার মতে, কেনেডি হত্যা নিয়ে ওয়ারেন কমিশনের রিপোর্টে যা লেখা হয়েছে তা সঠিক নয়।
ভেসিয়ানা-র দাবি ঠিক না ভুল, তা জানার জন্য অবশ্য আগামী অক্টোবর মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ডেভিড অ্যাটলি ফিলিপসকে নিয়ে সিআইএ-র কিছু গোপন গুরুত্বপূর্ণ নথি সেই সময়েই জনসমক্ষে প্রকাশ পাওয়ার কথা। তবে যদি তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আটকে দেয় তাহলে ভিন্ন কথা।
বিডি প্রতিদিন/১৬ জুন ২০১৭/হিমেল