তিনবার তালাক শব্দটি উচ্চারণ করে স্ত্রীকে বিবাহ বিচ্ছেদ দেওয়াটা মুসলিম সমাজের একটি প্রচলিত প্রথা। এই প্রথার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ভারতের মুসলিম নারীরা। বিষয়টি এখন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। আগামী মাসেই সম্ভবত এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা করবে দেশটির শীর্ষ আদালত। আর এবার পড়াশোনা করতে না দেওয়ায় স্বামীকেই তিন তালাক দিল এক মুসলিম কিশোরী। ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মল্লিকপুরে।
এই মুসলিম কিশোরীর সাহসী পদক্ষেপে স্বাভাবিকভাবে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। অনেকে মাম্পি খাতুন নামে ওই কিশোরীকে নোবেলজয়ী পাক-কন্যা মালালা ইউসুফজাইয়ের সঙ্গেও তুলনা করছেন। কেউ কেউ অবশ্য তার পদক্ষেপের সমালোচনাও করছেন।
তাদের মতে, মুসলিম সমাজে তিন তালাক দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র পুরুষদেরই। তবে লোকে কী বলল, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ বছর ষোলোর ওই কিশোরী। তার সাফ কথা, “মালালা ইউসুফ জাইয়ের মতো আমাকেও নিজের পথ নিজেকেই খুঁজে নিতে হবে। আমাদের প্রত্যেককেই নিজের লড়াইটা নিজেকে লড়তে হবে।”
জানা গেছে, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা মল্লিকপুরের মন্দিরবাজার এলাকায় একটি চায়ের দোকান চালান সারজুল ঘরামি। তিন মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে অভাবের সংসার তার। ২০১৫ সালে একপ্রকার জোর করে মেয়ে মাম্পির খাতুনের বিয়ে দেন তিনি। তখন নবম শ্রেণিতে পড়ত মাম্পি। পড়াশোনা করার ইচ্ছা থাকলেও, পরিবারের চাপে বিয়ে করতে বাধ্য হয় সে। যদিও বিয়ের আগে স্বামী ও তার বাড়ির লোকের কাছে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছিল সে, যে বিয়ের পরও তাকে পড়ার অনুমতি দিতে হবে।
কিন্তু বিয়ের পরই ছবিটা পালটে যায়। মাম্পির স্কুলে যাওয়া নিয়ে আপত্তি জানাতে শুরু করেন তার শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা। শুরু হয় ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ। এরই মধ্যে চলতি বছরে মাধ্যমিক পাস করে মাম্পি। কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কথা বললে, আপত্তি জানায় মাম্পির স্বামী। এর কিছুদিনের মধ্যে বাপের বাড়ি চলে যায় মাম্পি। বাড়ির লোকদের জানিয়ে দেয়, সে আর শ্বশুড়বাড়িতে ফিরবে না। বাপের বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করবে। গত মাসে স্থানীয় একটি স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় মাম্পি।
এই খবর পাওয়ার পরই মাম্পির বাপের বাড়িতে গিয়ে তুমুল অশান্তি করেন শ্বশুড়বাড়ির লোকেরা। মাম্পিকে শ্বশুড়বাড়ি ফিরে যেতে জোরাজুরি করা হয়। এরপরই সবার সামনে স্বামীকে তিন তালাক দেয় মাম্পি। তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে মাম্পির বাড়ির লোকেরাও। মাম্পির মা এখন বলছেন, ইচ্ছার বিরুদ্ধে মেয়ের বিয়ে দিয়ে ভুল করেছিলাম আমরা। আমাদের কাছে থেকে যতদূর খুশি পড়াশোনা করতে পারে ও।
বিডি-প্রতিদিন/ ১৭ জুন, ২০১৭/ আব্দুল্লাহ সিফাত-১২