ভারতে ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত গরু নিয়ে সহিংসতায় ৫১ শতাংশ ক্ষেত্রেই টার্গেট ছিল মুসলিমরা। গত সাত বছরে মোট ৬৩ টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে যেখানে প্রাণ গেছে ২৮ জনের। এর মধ্যে ২৪ জনই ছিল মুসলিম (৮৬ শতাংশ)। হামলায় আহত হয়েছে ১২৪ জনের বেশি মানুষ। যার মধ্যে শুধু গুজবকে কেন্দ্র করেই ৫২ শতাংশ সহিংসতা বা হামলার ঘটনা ঘটেেছে।
ইন্ডিয়া স্পেন্ড নামে একটি সংগঠনের জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য। জরিপটি করা হয়েছিল ২০১০ সালের শুরু থেকে ২০১৭’এর ২৫ জুন পর্যন্ত। জরিপে দেখা গেছে ২০১৪ সালের মে মাসে দিল্লিতে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ২৫ জুন পর্যন্ত গরুকে কেন্দ্র করে ৬১ টি (৯৬.৮ শতাংশ) হামলার ঘটনা ঘটেছে ভারতে। মোট ৬৩ টি সহিংসতার ঘটনার মধ্যে ৩২ ঘটনাই ঘটেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে।
দেশজুড়ে ৬৩টি সহিংসতার ঘটনার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িষ্যা বাদে দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে ১৩টি ঘটনা ঘটেছে (২১ শতাংশ)। উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে একমাত্র অাসামে এরকম একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
২০১৭ সালের প্রথম ছয় মাসে গো-ইস্যুতে হামলার ঘটনা ঘটেছে অন্তত ২০টি, সংখ্যাটা ২০১৬ সালের চেয়ে অন্তত ৭৫ শতাংশেরও বেশি। সেই প্রেক্ষিতে ২০১০ সাল থেকে শুরু করে গত সাত বছরের মধ্যে এই সময়টা সবচেয়ে খারাপ বলা যেতে পারে। হামলার নেপথ্যে ছিল গরু জবাই, গরু পাচার, গোমাংস ভক্ষণ, ঘরে গোমাংস মজুদ রাখার মতো অভিযোগ। আর এই অভিযোগেই গণপিটুনি, গোরক্ষকদের হাতে হামলা, খুন বা খুনের চেষ্টা, হয়রানি, শারীরিক নির্যাতন, গণধর্ষণের মত ঘটনা ঘটেছে।
দুইটি হামলার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের চেন দিয়ে বেঁধে, বিবস্ত্র করে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে, অন্য দুইটি হামলায় ক্ষতিগ্রস্থদের মেরে গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
জরিপে দেখা গেছে ২৩ টি হামলার ক্ষেত্রে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ(ভিএইচপি), বজরং দল বা স্থানীয় গো রক্ষক সমিতি’এর মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদী দলগুলির জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
গো-ইস্যুকে কেন্দ্র করে ২০১২ সালের ১০ জুন প্রথম হামলার ঘটনাটি ঘটে পাঞ্জাবের মানসা জেলার যোগা শহরে। একটি কারখানার পাশে একসঙ্গে ২৫টি গরুর লাশ পাওয়া যায়। এরপরই ভিএইচপি, গোশালা সঙ্ঘ, গ্রামবাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই কারখানাটিকে ভাঙচুরের পাশাপাশি ওই কারখানার দুই কর্মকর্তার দুইটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। হামলায় চার জন আহত হন, ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে তিন জনকে আটকও করা হয়।
তবে সবচেয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল দাদরির ঘটনা। গত ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রেটার নয়ডার দাদরির বিশারা গ্রামে গোমাংস খাওয়ার অভিযোগে আকলাখ সঈফি (৫০)-কে পিটিয়ে খুন করে উত্তেজিত জনতা। মারধর করা হয় আকলাখের ২২ বছরের ছেলে দানিশকেও। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন দানিশ। ওই ঘটনার পরই সারা ভারতজুড়ে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ওই ঘটনায় কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তাদের অভিমত ছিল কেন্দ্রের ‘ঘৃণার রাজনীতি’র ফলেই দাদরিতে ওই ঘটনা ঘটেছে।
বিডি প্রতিদিন/৩০ জুন, ২০১৭/ফারজানা