ইসরায়েলের প্রতি আজারবাইজানের এলহাম আলিয়েভ সরকারের আস্থা রাখার নীতি যে ভুল ছিল আবারও তা প্রমাণিত হয়েছে।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে একথা উঠে এসেছে, গুপ্তচরবৃত্তির কাজে ব্যবহৃত ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপের তৈরি 'পেগাসাস' নামে স্পাইওয়্যার দিয়ে আজারবাইজানে গুপ্তচরবৃত্তি চালিয়েছে ইসরাইল। পেগাসাস দিয়ে আজারবাইজানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের টেলিফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে।
আজারবাইজানে দুর্নীতিবিরোধী সাংবাদিকদের গবেষণা ক্লাবের পক্ষ থেকে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'পেগাসাস' স্পাইওয়্যার দিয়ে আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট, তার স্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা এবং দেশটির এক হাজারের বেশি সাংবাদিকের মোবাইলে আড়িপাতা হয়েছে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই, দখলদার ইসরায়েল বহু দিন ধরে পেগাসাসের মতো স্পাইওয়্যারসহ বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদেরকে ব্ল্যাকমেইল করে তাদেরকে ব্যবহার করছে। গুপ্তচরবৃত্তি কাজে ব্যবহৃত ইসরায়েলের তৈরি কুখ্যাত পেগাসাস তৈরির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা যায়, যেসব দেশের সরকার তাদের বিরোধী পক্ষের ওপর নজরদারী করার জন্য ইসরায়েলের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার কিনেছে এখন দেখা যাচ্ছে ওই সরকারগুলোই ইসরাইলের ফাঁদে পড়েছে। কেননা এতে করে ওই সরকারগুলোই এখন ইসরায়েলের যে কোনো অন্যায় দাবি মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ককেশীয় অঞ্চল, মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের আরব সরকারগুলো সবচেয়ে বেশি ইসরায়েলি হুমকির মুখে পড়েছে এবং আগামীতে তাদের সামনে আরও বিপদ অপেক্ষা করছে।
পাশ্চাত্যের কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কাছ থেকে পেগাসাস স্পাইওয়্যার কিনে যেসব দেশের সরকার তাদের বিরোধী রাজনৈতিক দল, গ্রুপ, নেতা ও সাংবাদিকদের ফোনে আড়ি পেতে গুপ্তচরবৃত্তি করছে তাদের মধ্যে আজারবাইজান, কাজাখস্তান, বাহরাইন, পোল্যান্ড, ভারত, মেক্সিকো, মরক্কো, রুয়ান্ডা, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের কথা উল্লেখ করা যায়। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, এসব সরকার ইসরায়েলের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার দিয়ে বিরোধীদের ওপর যে গুপ্তচরবৃত্তি করছে সে সংক্রান্ত অভিযোগ অস্বীকার করছে। আজারবাইজান সরকারের বিরুদ্ধেও বিরোধীদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে। যদিও এখন খোদ আজারবাইজান সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেই ইসরায়েলি গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে। অর্থাৎ কেউই ইসরায়েলি গুপ্তচরবৃত্তির হাত থেকে নিরাপদ নয়।
গত তিন দশকের ঘটনাবলীতে দেখা যায় আজারবাইজানের সঙ্গে ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় থাকলেও ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ সব সময়ই ওই দেশটির প্রেসিডেন্ট এলহাম আলিয়েভসহ অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করে গেছে। এভাবে আজারবাইজানের প্রশাসন, রাজনৈতিক অঙ্গন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, সামরিক ও সাংস্কৃতিকসহ সব ক্ষেত্রে ইসরায়েল প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। যাইহোক সব মিলিয়ে আজারবাইজান বর্তমানে বিরাট হুমকির মুখে রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত