এয়ারপোর্ট, সীমান্ত এবং নৌ-পথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারীদের সেলফোন, ল্যাপটপসহ সব ধরনের ডিজিটাল সামগ্রী পরখ করা হচ্ছে। ভিসাধারী, গ্রিনকার্ডধারীগণের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোন মতামত, অভিমত অথবা মন্তব্য দেখা গেলে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নিষিদ্ধ তালিকার কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে সম্পর্ক থাকলে, বা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশসমূহের বিরুদ্ধেও হিংসাত্মক কোন মতামত বা ছবি থাকলে কাস্টমস অ্যান্ড বোর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি) কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দিচ্ছেন না।
ভিসাধারী, এমনকি গ্রিনকার্ডধারীকেও ফিরিয়ে দিচ্ছেন নিজ দেশে। গ্রিনকার্ডধারীরা টানা ১৮০ দিনের বেশি বিদেশে অবস্থানের পর যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার সময় এয়ারপোর্ট, সীমান্ত ফাঁড়ি কিংবা সমুদ্র বন্দরে প্রচণ্ড রকমের জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হচ্ছেন। সিবিপি জানতে চাচ্ছেন কেন তারা এতোদিন বিদেশে ছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কেন তারা ফিরতে চাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে ট্যাক্স প্রদান করেছেন কিনা, বাড়ির মালিক কিনা অথবা কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে কিনা ইত্যাদি তথ্য ও ডকুমেন্ট। এমনকি কোন গ্রিনকার্ডধারী যদি ফেডারেল সরকারের মঞ্জুরির ওপর নির্ভরশীল ছিলেন বলে জানতে পারে তাহলে তাকে আর ঢুকতে দিচ্ছে না। সোজা নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহে এয়ারপোর্ট, সীমান্ত থেকে বেশ কিছু বিদেশিকে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনায় এক ধরনের আতংক তৈরি হয়েছে অভিবাসন সমাজে। ইমিগ্রেশনে অভিজ্ঞ এটর্নিরা তার গ্রিনকার্ডধারী ক্লায়েন্টদের পরামর্শ দিচ্ছেন পারতপক্ষে বিদেশে না যেতে। কারণ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন অভিবাসন-ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এটর্নিরা আরও পরামর্শ দিচ্ছেন যে, তার মক্কেলরা যেন কম্পিউটার , সেলফোনে এমন কিছু না রাখেন, এমনকি ই-মেলেও এমন কিছু না থাকে-যা দেখলেই সিবিপি এজেন্টরা তাকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদে প্রবৃত্ত হয়। হোয়াটসঅ্যাপ, টেক্সট-কথোপকথন ইত্যাদিতেও এমন কিছু যাতে না থাকে-সে পরামর্শও দিচ্ছেন। কারণ, যখনই কোন যাত্রীকে পরখ অথবা জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে পৃথক কক্ষে নেয়া হচ্ছে, তখনই এসব ডিভাইস যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘন্টা। তাই বিব্রতকর কোন পরিস্থিতি এড়াতে ডিভাইসগুলো পুরোপুরি ক্লিন রাখাই শ্রেয় বলে মন্তব্য এটর্নিরা।
এ অবস্থার কঠোর সমালোচনা করে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, এধরনের আচরণে সিবিপি যুক্তরাষ্ট্র সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী লংঘন করছে। সেই সংশোধনী অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে তল্লাশী অথবা জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে আদালতের অনুমতি লাগবে। এ ধরনের বক্তব্য খণ্ডন করে সিবিপি অবশ্য গণমাধ্যমে বলেছে যে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে তারা এসব করার এখতিয়ার রাখেন।
ফ্রান্সের এক গবেষক যুক্তরাষ্ট্রে একটি কনফারেন্সে আসছিলেন অস্থায়ী ভিসা নিয়ে। গত সপ্তাহে তাকে টেক্সাসের হিউস্টন এয়ারপোর্টে থামিয়ে দেয়া হয়। কারণ, তিনি নিজ দেশে অবস্থানকালে প্রেসিডেন্ট টাম্পের অনেক পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং তার কম্পিউটারে সেসব পাওয়া গেছে। একইভাবে রোড আইল্যান্ড স্টেটে অবস্থিত ব্রাউন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডা. রাশা আলাওয়ি ছিলেন এইচ-ওয়ানবি ভিসাধারী। ফিরছিলেন নিজ দেশ লেবানন থেকে। তাকে বস্টনের লগোন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোার্টে থামিয়ে দেয়া হয়। কারণ, তার ফোনে ছিল হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহর ছবি এবং তিনি লেবাননে নাসরুল্লাহর জানাযায়ও অংশ নিয়েছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল