চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় গুয়াংডং প্রদেশে মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে। জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রদেশজুড়ে ৭ হাজারের বেশি আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এর জেরে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ মহামারির সময়ের মতো কঠোর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা গুয়াংডংয়ের ফোশান শহরে। সেখানে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালেই ভর্তি রাখা হচ্ছে এবং তাদের শয্যা মশারির ভেতরে রাখা বাধ্যতামূলক। রোগীরা এক সপ্তাহের মধ্যে আরোগ্য লাভ করলে কিংবা ভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল এলে তবেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র মিলছে।
চিকুনগুনিয়া মূলত মশার কামড়ে ছড়ায় এবং এই ভাইরাসে জ্বর ও তীব্র গাঁটে ব্যথা দেখা যায়, যা কখনো কখনো বছরের পর বছর স্থায়ী হতে পারে। চীনে এই রোগ এখনও তুলনামূলকভাবে বিরল হলেও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু অংশে এটি পরিচিত একটি রোগ।
ফোশান ছাড়াও গুয়াংডং প্রদেশের আরও অন্তত ১২টি শহরে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। শুধু গত সপ্তাহেই প্রায় ৩ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। হংকংয়েও ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে—ফোশান সফর করে ফেরা ১২ বছর বয়সী এক ছেলের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
চিকুনগুনিয়া ছোঁয়াচে নয়। এটি একজন সংক্রমিত ব্যক্তিকে কামড়ানো মশার মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করে। তবে ভাইরাস সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা কম থাকায় এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবোতে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, এটা ভয়ঙ্কর... এই রোগের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব খুবই কষ্টকর বলে মনে হচ্ছে।
চীনা কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৯৫ শতাংশ রোগী এক সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোগের প্রকৃতি মৃদু। তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে নিতে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানি, যেমন ফুলদানি, কফি মেশিন বা বোতলে জমা জল পরিষ্কার না করলে ১০ হাজার ইউয়ান পর্যন্ত জরিমানার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
মশা নিয়ন্ত্রণে অভিনব এক উদ্যোগ হিসেবে ছাড়া হয়েছে বিশাল আকারের 'হাতি মশা', যারা চিকুনগুনিয়া ছড়ানো ক্ষুদ্র মশাগুলো খেয়ে ফেলে। একই সঙ্গে বিভিন্ন জলাশয়ে ছাড়া হয়েছে মশার লার্ভা খাওয়া মাছ। ফোশান শহরে ইতোমধ্যেই প্রায় ৫ হাজার এ ধরনের মাছ ছাড়া হয়েছে। শহরের কিছু অংশে ড্রোনের সাহায্যে জমা পানির উৎস চিহ্নিত করা হচ্ছে।
শুরুতে ফোশান থেকে আগতদের জন্য কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হলেও পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তবে অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের ব্যবস্থা হয়তো অতিরিক্ত। কেউ কেউ লিখেছেন, এগুলো বেশ পরিচিত লাগছে... কিন্তু আদৌ কি দরকার আছে? আবার কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে রোগী অন্য কাউকে কামড়াবে না, সেখানে কোয়ারেন্টাইন কতটা যৌক্তিক?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে মশার প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ—যেমন জমে থাকা পানি নষ্ট করে ফেলা। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের সাধারণত তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে জ্বর ও গাঁটে ব্যথা দেখা দেয়। অনেকেই এক সপ্তাহের মধ্যেই সেরে ওঠেন, তবে বয়স্ক, সদ্যোজাত শিশু এবং যাদের আগেই হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে। তবে মৃত্যুহার অত্যন্ত কম।
চিকুনগুনিয়া ভাইরাস ১৯৫২ সালে তানজানিয়ায় প্রথম শনাক্ত হয় এবং পরে এটি আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে ১১০টিরও বেশি দেশে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল