শনিবার, ১০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ অঞ্চল তালেবানের দখলে?

আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ অঞ্চল তালেবানের দখলে?

আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আগামী ৩১ আগস্ট দেশটিতে আমেরিকার সৈন্যদের কাজ শেষ হবে। বাইডেন হচ্ছেন আমেরিকার চতুর্থ প্রেসিডেন্ট যিনি আফগান যুদ্ধে আমেরিকার কার্যক্রম দেখাশোনা করছেন। আর যে গতিতে সৈন্য প্রত্যাহার করা হচ্ছে, সেটিকেও সমর্থন করেছেন তিনি।

তালেবান যোদ্ধারা যখন আফগানিস্তানে একটির পর একটি এলাকা দখল করে নিচ্ছে, তখন বাইডেনের এই বক্তব্য এলো। প্রেসিডেন্ট বাইডেন যখন এ কথা বলছেন, তখন তালেবানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, আফগানিস্তানের ৮৫ শতাংশ অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। গতকাল রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় তালেবানের একটি প্রতিনিধি দল এ দাবি করে। মস্কোয় সংবাদ সম্মেলনে তালেবান প্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আফগানিস্তানকে ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালাতে দেবে না তারা।

রয়টার্স জানায়, তালেবান প্রতিনিধিরা স্পষ্ট করতে চেয়েছে যে তারা যদি কাবুলে ক্ষমতায় আসে তাহলেও অন্য দেশগুলোর সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিশেষ করে জিহাদি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে রুখতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেবে তালেবান।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ারে হামলার পর গত ২০ বছর ধরে আমেরিকার সৈন্যরা আফগানিস্তানে অবস্থান করে যুদ্ধ করছে। কিন্তু কোনো স্থায়ী সমাধান ছাড়াই আমেরিকা তাদের সৈন্যদের প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছে। আর মার্কিন সেনারা সে দেশে এসেই সে সময়ের তালেবান সরকারকে উৎখাত করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তালেবান হটিয়েছিল আমেরিকা, আবার আমেরিকার সৈন্যরা ফিরে যাওয়ার আগেই আফগানিস্তানের বেশির ভাগ এলাকা দখল করে নিয়েছে তালেবানরা। এমনকি তাদের ভয়ে অনেক আফগান সরকারি সেনাসদস্য দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, ‘আফগানিস্তানে আর এক বছর বেশি যুদ্ধ করে কোনো সমাধান আসবে না।’ বাইডেন আরও দাবি করেছেন, তালেবান আফগানিস্তান দখল করে নিতে পারবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আফগানিস্তানের ৩ লাখ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের কাছে তালেবানের ৭৫ হাজার সদস্য কিছু করতে পারবে না।

তিনি বলেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পরেও দেশটিতে মার্কিন দূতাবাস, কাবুল বিমানবন্দর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য ৬৫০ থেকে ১ হাজার মার্কিন সৈন্য রাখা হবে।

আফগান-ইরান সীমান্ত দখল করল তালেবান : ইরানের সঙ্গে আফগানিস্তানের সীমান্ত ক্রসিংসহ দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় অন্যতম একটি জেলার দখল নিয়েছে তালেবান। আফগানিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, দেশজুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে ইরান, তাজিকিস্তান, তুর্কিমেনিস্তান, চীন ও পাকিস্তান সীমান্তে আফগান বাহিনীর ওপর হামলা জোরদার করেন সশস্ত্র এই গোষ্ঠীটির যোদ্ধারা। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ার প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে দেশটিতে সরকারি সেনাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরালো করেছে তালেবান।

দুজন শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে রয়টার্সকে বলেন, হেরাত প্রদেশে ইরানের সঙ্গে ইসলাম কঅলা সীমান্ত ক্রসিং তালেবান যোদ্ধারা দখল করে নিয়েছেন। হামলার মুখে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ কাস্টমস কর্মকর্তারা ইরানে পালিয়ে যান।

তবে আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র  তারিক আরিয়ান দাবি করেন, ইরানের সঙ্গে ইসলাম কঅলা সীমান্ত ক্রসিং এখনো আফগান সরকারের নিয়ন্ত্রণেই আছে।

অন্য এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বিনা বাধায় হেরাত প্রদেশের পাঁচটি জেলা দখল করে নিয়েছেন তালেবান যোদ্ধারা। অবশ্য এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে হেরাত প্রদেশের গভর্নর ও পুলিশপ্রধানের সঙ্গে রয়টার্স যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁরা কেউ ফোন ধরেননি।

এদিকে বালখ প্রদেশের উজবেকিস্তান সীমান্তে তালেবান যোদ্ধা ও আফগান সরকারি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এই সপ্তাহের শুরুর দিকে উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ বাদাখশানের বেশির ভাগ এলাকা দখল করে নেয় তালেবান।

সর্বশেষ খবর