কানাডায় দাবানলের ঘন ধোঁয়ায় ঢেকেছে নিউইয়র্কসহ বেশ কয়েকটি শহরের আকাশ। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলজুড়ে স্কুলগুলোর বাইরে সব কার্যক্রম বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। ফ্লাইট বিপর্যয় দেখা গেছে এবং কানাডার এই দাবানলের ধোঁয়া দক্ষিণে চলে যাওয়ায় লক্ষাধিক মার্কিন নাগরিককে বাড়ির ভিতরে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। শহরগুলো ঘন, হলদেটে কুয়াশায় ছেয়ে গেছে।
এদিকে বাতাসের মান খারাপ হওয়ায় উত্তর আমেরিকার লাখ লাখ মানুষকে ঘরের বাইরে বের হলে এন৯৫ মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গতকাল থেকেই নিউইয়র্কে বিনা পয়সায় মাস্ক বিতরণ করা শুরু হয়েছে। কানাডা বলেছে, মানুষ যদি ঘরে থাকতে না পারে এবং বাইরে বের হয় তাহলে তাদের মাস্ক পরা উচিত। কর্মকর্তারা বলেছেন, বিপজ্জনক এ ধোঁয়াটে অবস্থা পুরো সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। বেশির ভাগ ধোঁয়া আসছে কানাডার কুইবেক থেকে। সেখানে ১৫০টির বেশি আগুন জ্বলছে। নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হচুল বুধবার বলেন, বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের বাসিন্দাদের মধ্যে ১০ লাখ মাস্ক বিতরণ করা হবে। সুইস এয়ার কোয়ালিটি টেকনোলজি কোম্পানি ‘আইকিউ এয়ার’ জানায়, মঙ্গলবার রাত ১টা ৫ মিনিটে নিউইয়র্কের বাতাসের গুণমান সূচক ওঠে ২২২-এ, যা আমেরিকার বাতাসের গুণমান সূচকের নিরিখে ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’। সেই সময়ে ভারতের রাজধানী দিল্লি, ইরাকের রাজধানী বাগদাদের মতো দূষিত শহরগুলোর বাতাসের অবস্থা নিউইয়র্কের চেয়ে ভালো ছিল। মার্কিন কর্তৃপক্ষ আরও কিছু অঞ্চলে অত্যন্ত খারাপ মানের বাতাসের সতর্কতা জারি করেছে। বাতাসে ভাসমান কালি, ছাইয়ের মাত্রা বিপজ্জনক স্তরে আছে।
ইউএস ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস সতর্ক করে বলেছে, বায়ুমন্ডলে শক্তিশালী বাতাস দীর্ঘ দূরত্ব পর্যন্ত ধোঁয়া পরিবহন করতে পারে। যেখানে জঙ্গল পুড়ছে সেখান থেকে শত শত মাইল দূরে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। ঘন ধোঁয়ার কারণে দুই দিন মধ্য নিউইয়র্কের ১০টি স্কুলে বাইরের সব কার্যক্রম বাতিল করে দেয়। স্কুল বিল্ডিংয়ের বাইরে অধ্যয়ন, খেলাধুলা, স্কুলের বাইরে গিয়ে বিরতি, জিম ক্লাস সবই বাতিল হয়েছে। বুধবার প্রথমে মনে করা হয়েছিল যে, অবস্থা ভালো হবে। কিন্তু বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কার কথাই জানানো হয়েছে।
কানাডাও সাম্প্রতিক অতীতে এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েনি। ৩৩ লাখ হেক্টর এলাকা, সেখানকার গাছগাছালি ইতোমধ্যে পুড়ে গেছে। কানাডার অন্তত ২৬ হাজার বাসিন্দা তাদের ঘরবাড়ি খালি করতে বাধ্য হয়েছেন। এ দাবানলের পেছনেও বিশ্ব উষ্ণায়নকে দায়ী করছেন পরিবেশবিদদের একাংশ।
বিলম্বিত ফ্লাইট : কানাডায় দাবানলের কারণে সীমিত দৃষ্টিসীমা তৈরি হওয়ার কারণে নিউইয়র্কের প্রধান প্রধান বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিলম্বিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভ্রমণকারীদের সতর্ক করে বলেছে, নিউইয়র্কের লাগার্ডিয়া এবং পাশের নেওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট ২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্ব হতে পারে। ফ্লাইট অ্যাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, নিউইয়র্ক সিটি এয়ারপোর্টে প্রায় ৮০০ ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে।