লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজধানী ত্রিপোলিতে এক মিলিশিয়া বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত একটি হাসপাতালে অন্তত ৫৮টি লাশ পাওয়া গেছে। এই মিলিশিয়া বাহিনীর নেতা গত সপ্তাহে খুন হয়েছেন। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে, ত্রিপোলির ঘনবসতিপূর্ণ আবু সালিম এলাকার আবু সালিম অ্যাকসিডেন্ট হাসপাতালের মর্গের ফ্রিজে লাশগুলো পাওয়া গেছে। রয়টার্স জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুখ ঢেকে দিয়ে নম্বরযুক্ত লাশগুলোর ছবি প্রকাশ করেছে। তাতে বেডে ও স্টিলের ক্যারিয়ারে শায়িত বিকৃত হয়ে যাওয়া বিভিন্ন লাশের অবশিষ্টাংশ দেখা গেছে। কিছু লাশের অবশিষ্টাংশ পোড়া ছিল। এই লাশগুলোর পরিচয় শনাক্ত করতে একটি তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৩টি লাশের পরীক্ষা করা হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়টি জানিয়েছে।-রয়টার্স
ত্রিপোলির অন্যতম প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী স্ট্যাবিলাইজেশন সাপোর্ট অ্যাপারেটসের (এসএসএ) ঘাঁটি আবু সালিমে। গত ১২ মে এই দলের প্রধান আবদুলঘানি কিকলি নিশ্চিত হয়নি এমন এক পরিস্থিতিতে নিহত হন। তার নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্রিপোলিজুড়ে সংঘাত শুরু হয়ে যায়। পরে অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে সংঘাত বন্ধ হয়। লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত জাতীয় ঐক্য সরকারের (জিএনইউ) প্রধানমন্ত্রী আবদুলহামিদ আল-দিবেইবাহের অনুগত উপদলের আক্রমণে কিকলি নিহত হয়েছেন বলে খবর। এতে এসএসএ হঠাৎ করেই পরাজিত হয়। মঙ্গলবার দিবেইবাহ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পর ত্রিপোলিতে সশস্ত্র দলগুলোর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়। এই সংঘাতে অন্তত আট বেসামরিক নিহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। সোমবারের আগেও আরেক সেট অজ্ঞাত লাশ পাওয়া গেছে। শনিবার কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, আবু সালিম এলাকায় এসএসএর নিয়ন্ত্রিত আরেক হাসপাতাল আল-খাদরার মর্গে নয়টি বিকৃত লাশ পাওয়া গেছে। ত্রিপোলির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সশস্ত্র গোষ্ঠীটি এসব লাশের কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেনি। সোমবার জিএনইউর পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, বুলডোজার দিয়ে ৭৭ ক্যাম্প নামে পরিচিত এসএসএর সবচেয়ে বড় স্থাপনাটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এই শিবিরটি ভেঙে সেখানে পার্ক বানানোর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী দিবেইবাহ জানিয়েছেন, মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকে বিলুপ্ত করার কাজ অব্যাহত থাকবে। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়ায় সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ২০১১ সালে নেটো সমর্থিত সশস্ত্র গণ অভ্যুত্থানে গাদ্দাফির পতন হয় ও তিনি নিহত হন। এরপর ২০১৪ সালে দেশটি লড়াইরত পূর্বাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলীয় উপদলগুলোর মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ২০২০ সালে এক অস্ত্রবিরতির মাধ্যমে বড় ধরনের লড়াইগুলো বন্ধ হয়। কিন্তু দেশটির রাজনৈতিক সংকট দূর করার প্রচেষ্টাগুলো সফল হয়নি। বড় বড় উপদলগুলো প্রায়ই প্রাণঘাতী সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে আর তারা লিবিয়ার পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। ত্রিপোলি ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জিএনইউ এবং দেশটির অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। এখানে বেশ কয়েকটি প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র উপদল আছে যারা প্রায়ই তীব্র লড়াইয়ে লিপ্ত হয়।