বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনেই উৎসবে মাতোয়ারা পশ্চিমবঙ্গের মানুষও। বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে এবং এই দিনটি বাংলা তথা বাঙালির কৃষ্টি সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে এবারও এদিন সকালের দিকে কলকাতার যাদবপুর সুলেখা মোড় থেকে যোধপুর পার্ক পর্যন্ত বিশাল মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। তাতে পা মেলান কচি-কাচা থেকে বয়স্ক, স্কুলের শিক্ষার্থীরাও।
অন্যদিকে আবার পদ্মার ইলিশ উৎসব দিয়ে অভিনব বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে মেতে ওঠেন বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যটির উত্তরচব্বিশ পরগনা জেলার বনগার মানুষ। বনগা পৌরভার ভাইস চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্যের উদ্যোগে স্থানীয় বিএস ক্লাবের মাঠে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়। নাচ-গান তো ছিলই সেই সাথে পান্তাভাত, কচুশাক, ইলিশমাছ ভাজা, বিউলির ডাল আর শেষ পাতে জিলাপি। সব মিলিয়ে বাঙালিয়ানার সঙ্গে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করা হয়। ইলিশ উৎসবে অংশগ্রহণ করে খুশি এলাকার বাসিন্দারা।
এ নিয়ে জ্যোস্না আঢ্য জানান, ‘নববর্ষের অনুষ্ঠান করার জন্য বাংলাদেশ থেকে দুই ক্যুইন্টাল ইলিশ আনা হয়েছিল। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সমস্ত মানুষকে এই উৎসবে সামিল করেছি।’ তার দাবি 'এর আগে বনগাঁতে এমন ধরনের অনুষ্ঠান কখনো হয়নি।'
এর পাশাপাশি কলকাতার কালীঘাট মন্দির, লেখ কালিবাড়ী, দক্ষিণেশ্বর কালি মন্দির, তারকেশ্বর মন্দির, তারাপীঠের কালি মন্দির, বেলুড় মঠ-সর্বত্রই ছিল ভক্তদের ভিড়। করোনার আবহে গত দুই বছর এই সব মন্দিরের দরজা কার্যত বন্ধ ছিল দর্শণার্থীদের জন্য। ফলে এদিন সকাল থেকেই ওই সব ধর্মীয় স্থানগুলিতে ছিল ভক্তদের পূজা দেওয়ার লম্বা লাইন। শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কেও বর্ণিল অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বর্ষবরণ উৎসবে সামিল হয় এলাকার মানুষ। সেখানে সঙ্গীতানুষ্ঠানে গলা মেলান শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব।
রাজ্যজুড়েই প্রায় প্রতিটি দোকান-প্রতিষ্ঠানগুলিতেও এই পহেলা বৈশাখের দিন ‘হালখাতা’ ও বিশেষ পূজা দেওয়া হয়।
তেমনই দুই বছর পর কলকাতার ময়দানেও বড় দুই ফুটবল ক্লাব- ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান- এই ক্লাবগুলিতেও এবার খুঁটি পূজার আয়োজন করা হয়। ফলে ক্লাব কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ফুটবলার, সদস্য ও সমর্থকদের মধ্যেও ছিল বিশাল উদ্দীপনা। সকাল আটটা নাগাদ ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাবুতে এবার পূজা শুরু হয়। মন্ত্র পাঠ করে রীতি মেনে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয় গোলপোস্ট বা বার। বারপূজা অনুষ্ঠান শেষে ক্লাব পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে প্রথা মেনেই সদস্য-সমর্থকদের মিষ্টিমুখ করানো হয়।
একইভাবে আরেক জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী ‘মোহনবাগান’ ক্লাব তাবুতেও সম্পন্ন হয় তাদের বার পূজা। ঐতিহ্য ও রীতি মেনে মন্ত্র পাঠ করে নতুন গোলপোস্ট লাগানো হয়।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল