সবকিছু ঠিক থাকলে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তেও চালু হতে চলেছে বর্ডার হাট (সীমান্ত হাট)। সে ক্ষেত্রে এই প্রথম সীমান্ত হাট পেতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ।
বৃহস্পতিবার কলকাতার 'ভারত চেম্বার অব কমার্স'এ আয়োজিত 'ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ: নিউ হরিজনস অব ট্রেড এন্ড বাইলেটারাল রিলেশন' শীর্ষক এক আলোচনায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
মন্ত্রী বলেন, গত মঙ্গলবার রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি তাকে বলেছি ভারতের অন্য রাজ্যগুলোতে সীমান্ত হাট থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কোন সীমান্ত হাট নেই। সেখানেই বাংলাদেশের মন্ত্রী প্রস্তাব দেন আমাদের উত্তরবঙ্গের মাথায় লালমনিরহাট জেলার ভুরুঙ্গামারী, এপারে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার দিনহাটা সীমান্ত। আমি ঐসব এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমি বাংলাদেশের ওই জায়গাটা দেখেও এসেছি। আমরা ওখান থেকেই শুরু করতে চাই।"
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এই বিষয়টিতে খুব সদর্থক। তিনি বলেন, আমরা সেখানে করতে চাই। আমাদের প্রস্তাব দিন। আমরা সেটা বিবেচনা করে দেখছি।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৩ জুলাই প্রথম সীমান্ত হাট নির্মাণ হয় মেঘালয়ের ওয়েষ্ট গারো হিলস জেলার কালাইচর ও কুরিগ্রাম (বাংলাদেশ)-এ। এরপর ধীরে ধীরে মেঘালয়ের পাশাপাশি উত্তরপূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যেও চালু হয় বর্ডার হাট। কিন্তু সে ক্ষেত্রে এক প্রকার বঞ্চিতই ছিল পশ্চিমবঙ্গ। যদিও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে বর্ডার হাট চালুর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়েছিল, বিষয়টি জানানো হয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেও। এরপরই এ রাজ্যে বর্ডার হাট তৈরির পরিকল্পনায় সম্মত হয় ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশই। সে ক্ষেত্রে প্রথমে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবেই ভুরুঙ্গামারী সীমান্তে বর্ডার হাট তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের ব্যাপারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, ''বাংলাদেশসহ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশকে ভারত সরকার তাদের দেশে বিনিয়োগের সুযোগ বন্ধ করে রেখেছে। ভারতে তারা বিনিয়োগ গ্রহণ করছে না। আমরা চাইছি বটে। তবে যেটা শুনেছি, কেউ যদি বাংলাদেশ থেকে ভারতে বিনিয়োগ করতে চায় তার "কেস টু কেস" তারা পর্যালোচনা করবে। আমরা এখানে বিনিয়োগ করতে চাই। কারণ বাংলাদেশ সরকার সুযোগ করে দিয়েছে, যে সমস্ত সম্ভাবনাময় ব্যবসায়ী আছে তারা যদি বিদেশে গিয়ে ব্যবসা করতে চায়, করতে পারে।"
তার অভিমত "মুষ্টিবদ্ধ হাতে যেমন করমর্দন হয় না তেমনি আমাদেরও থেমে থাকলে হবে না। এখনই শুরু করে দিতে হবে। আমাদের ব্যবসা বাড়াতে হবে। কারণ আমি মনে করি, better late than never.
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে টিপু মুনশি বলেন, "সে সময় ১ কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন, আমরা কষ্ট দিয়েছি, আপনারা সেই কষ্ট পেয়েছেন। প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, আমরা স্বাধীন হয়েছি, যুদ্ধে ভারতীয় সেনারা প্রাণ দিয়েছে। তাই সেই সম্পর্ক আজ রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ।"
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, "দেশের প্রতি হাসিনার নজর, অকৃত্রিম ভালোবাসার কারণেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আজ পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে আছে।"
এবার থেকে কলকাতা বাংলাদেশ থেকে নিয়মিতভাবে কলকাতায় ইলিশ পাঠানো হবে কিনা সে প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, "দেখি আপনারা আমাদের জন্য কি কি খাবার পাঠান। তবে পূজোর সময় আবার পাঠাবো। এই বিষয়টিতে শেখ হাসিনাও খুব নজর রাখেন। তিনিই আমাকে বলেন, যে ইলিশ মাছ খুলে দিলে, ওপার বাংলার (পশ্চিমবঙ্গ) ভাইরা কি খাবে।"
মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে কোন কথা হয়েছে কিনা তা নিয়ে টিপু মুনশি বলেন, "আগে তিস্তার পানি আসুক, তার পরে কথা হবে।"
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারত চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট এন.জি খৈতান, সেক্রেটারী জেনারেল কেয়া শর্মা, কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, বাংলাদেশ থেকে আসা ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
এন জি খৈতান বলেন, আমরা দুই পারের মানুষ রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালোবাসি, ভাষা এক, একই সীমান্ত। তবে আমরা বাণিজ্য ক্ষেত্রে কেনো পিছিয়ে থাকবো? বাংলাদেশ-ভারতের পরে স্বাধীন হয়েও তার মাথাপিছু আয় ভারতের চেয়ে বেশি। পোশাক শিল্প যেভাবে ইন্নতি করেছে তাও অবিশ্বাস্য।
এসময় দুই দেশের বাণিজ্যের সাহায্যের জন্য ভারত চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে নতুন করে "বাংলাদেশ ডেস্ক" নামে একটি কাউন্টার চালু করার কথা বলেন। তার অভিমত আফ্রিকাসহ কয়েকটি দেশের নামে ডেস্ক থাকলেও বাংলাদেশে ডেস্ক বলে কোন কিছু নেই। বাংলাদেশ ডেস্ক চালু হলে বাংলাদেশ সম্পর্কিত সমস্ত রকম তথ্য বা সহায়তা পাওয়া যাবে।
দুই দেশের বাণিজ্যের স্বার্থে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সম্পর্ক এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণ গড়ে তুলতে বছরে অন্তত দুই বার প্রতিনিধি সম্মেলন শুরুর প্রস্তাব দেন তার অভিমত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বছরে দুইবার অর্থাৎ প্রতি ছয় মাসে একবার করে দুই বাংলার প্রতিনিধিরা আসা-যাওয়া করবেন এবং ব্যবসা সংক্রান্ত মতবিনিময় করার প্রস্তাব রাখেন বাংলাদেশের মন্ত্রী সেই প্রস্তাবে সায় দেন।
বণিক সভার অনুষ্ঠান শেষে এদিন সন্ধ্যায় কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
আগামীকাল শুক্রবার দুপুরে চার দিনের সফরে উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য মিজোরামের রাজধানী আইজলে যাবেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এই সফরেও তার লক্ষ্য সেখানে বাণিজ্য বৃদ্ধি। মিজোরামের সীমান্তবর্তী এলাকা লাংলেই জেলার কাওরপুইছুয়া এলাকায় ‘সুসংহত চেক পোস্ট’ (আইসিপি)-এর অবকাঠামোর কাজ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি মামিত জেলার সিলসুরি’তে প্রস্তাবিত ‘বর্ডার হাট’এর স্থান পরিদর্শন করবেন। টিপু মুনশির সঙ্গে থাকবেন মিজোরামের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী আর. লালথানগ্লিয়ানা।
আগামীতে আসাম ও মেঘালয়ের মতো সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোতেও সফর করবেন টিপু মুনশি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত