.jpg)
শিরোনাম
- শ্রমিকদের ন্যায্য আদায়ের লড়াইয়ে পাশে আছে বিএনপি : আমীর খসরু
- টেসলার সিইও হিসেবে ইলন মাস্ককে পরিবর্তনের খবর মিথ্যা
- আমরা ১৭ বছর গাছের গোড়ায় পানি ঢেলেছি, এখন ফল খাচ্ছেন আপনারা : মির্জা আব্বাস
- মেসেঞ্জারে ভুল মেসেজ পাঠিয়ে ফেলেছেন? মাত্র ১৫ মিনিটে বাঁচার উপায়!
- আবারও ব্যাট-বল নিয়ে মাঠে নামছেন শোবিজ তারকারা
- চ্যাটজিপিটির পরামর্শে মামলায় জিতলেন তরুণ
- গ্রিনকার্ড থাকলেই নিশ্চিন্ত নন, যুক্তরাষ্ট্রে শুরু নতুন নজরদারি
- পাকিস্তানি তারকাদের ইনস্টাগ্রামে ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ!
- আমরা শ্রমিকবান্ধব একটি সরকার চাই : মাসুদ সাঈদী
- রাবনাবাদ নদী থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার
- দেশজুড়ে অভিযানে অস্ত্রসহ গ্রেফতার ১১৩৭
- মৃত্যুকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কুমির ভর্তি লেকে ঝাঁপ দিলেন নওয়াজ!
- “রাত না কাটালে বাদ!” অঞ্জনার বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি
- উত্তেজনা বাড়িয়ে ভারত সীমান্তে পাকিস্তানের পূর্ণমাত্রার সামরিক মহড়া
- ছাদ থেকে পড়ে কলেজ ছাত্রী আহত
- করিডর দেয়ার সিদ্ধান্ত আসতে হবে নির্বাচিত সংসদ থেকে : তারেক রহমান
- দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় এমন চুক্তি না করার আহ্বান মির্জা ফখরুলের
- ফেনীতে মে দিবসে আলোচনা সভা
- মাগুরায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
- দিনাজপুরে র্যালি-আলোচনায় প্রাণবন্ত মে দিবস
বাংলাদেশি পর্যটকদের অপেক্ষায় কলকাতার নিউমার্কেট
পথ চেয়ে নামিদামি বেসরকারি হাসপাতালগুলিও
দীপক দেবনাথ, কলকাতা
অনলাইন ভার্সন

‘তোমার দেখা নাইরে, তোমার দেখা নেই...’। নিউমার্কেটের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ফুটপাতের এক পোশাক বিক্রেতার গলায় বাংলা ব্যান্ডের এই জনপ্রিয় গানের কয়েকটি কলি শুনতেই থামতে হল। তবে তার গলায় এই গান আনন্দের নয়, হতাশার! যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
করোনার কারণে গত প্রয় দুই বছর স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল ব্যবসা-বাণিজ্য। জমানো টাকায় হাত পড়ায় মানুষের আয়ও ধীরে ধীরে সীমিত হয়ে পড়ে। মানুষের সাধারণ জীবন যাপনে দম বন্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে মানুষের মনে আনন্দ, উল্লাস বা উৎসব- সবকিছুই কর্পূরের মতো উড়ে যায়। ধীরে ধীরে অতিমারি পরিস্থিতি কাটিয়ে একটু স্বাভাবিকের দিকে হাঁটা শুরু হয়েছে বটে, তবে ক্রেতা-বিক্রেতা কারোর মনেই নেই সেই স্ফূর্তি, নেই কেনাকাটার সেই আনন্দ।
.jpg)
কলকাতায় বাংলাদেশি পর্যটকদের সবচেয়ে বড় জমায়েত হয় নিউ মার্কেট চত্বরে। তার কারণ একটাই- পিন থেকে এলিফ্যান্ট- সবকিছুই পাওয়া যায় এক ছাতার তলায়। আর সেই কারণেই বাংলাদেশিদের সেরা ডেস্টিনেশন নিউ মার্কেট। বছর ভরই পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। যদিও ঈদের সময় চিত্রটা একটু আলাদা। ফ্রি স্কুল স্ট্রীট, লিন্ডসে স্ট্রীট, মির্জা গালিব স্ট্রীট, মারক্যুইস স্ট্রীট, সদর স্ট্রীট- সর্বত্রই বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করে। সে অর্থে এবছর নিউ মার্কেট চত্বর কার্যত খাঁ খাঁ চেহারা নিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে করোনার আগে যে পরিমাণ বাংলাদেশি পর্যটকের উপস্থিতি ছিল, এবার তার ‘চার ভাগের এক ভাগ’ (১/৪) এসে ঠেকেছে। স্থানীয় হোটেল, গেস্ট হাউজ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে পোশাক বিক্রেতা, চুড়িমালা সকলেই কার্যত হাপিত্যেশ করে বসে আছেন ক্রেতার আশায়।
দেখতে দেখতে ২০ রোজা পার হয়ে গেছে, কিন্তু বাকি রোজায় বাংলাদেশিরা এসে ভরিয়ে দেবেন- এমন ভরসা কেউই করতে পারছে না। যদিও উপরআলার উপরে কারও কারও এখনো ভরসা এখনও অটুট!
‘মেজর ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউস’ এর মালিক সাঈদ রায়নাদি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'এবারে বাংলাদেশি পর্যটক অনেক কম। অন্যান্যবার প্রথম রোজা থেকে কুড়ি রোজা পর্যন্ত অনেক ভিড় থাকে। সে তুলনায় অনেক কম ভিড়।' তবে যেহেতু টুরিস্ট ভিসা চালু হয়ে গেছে সেক্ষেত্রে ধীরে ধীরে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন এবং আগামী দিনে বাজারও স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
নিউমার্কেটের পোশাক বিক্রেতা মো. ইশতেখার আলী জানান ‘আমাদের কেনাবেচা মূলত বাংলাদেশি পর্যটকদের উপরই নির্ভরশীল। ওরা এখানে আসলে প্রচুর পরিমাণে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যান। ফলে তখন মনে হত যে ঈদের বাজার সত্যিই শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এবছর বিক্রি-বাট্টা একেবারেই নেই। বাংলাদেশি পর্যটকরা এখনো সেভাবে আসছে না। আগামী দিনেও পরিস্থিতি ফিরবে বলে মনে করেন না তিনি।
আরেক পোশাক বিক্রেতা মোহাম্মদ আফ্রিদি বলেন, ‘বাজার অনেক খারাপ আছে। প্রথমত বাংলাদেশ থেকে পর্যটকরা আসছেন না, দ্বিতীয়তঃ স্থানীয়রাও করোনার ভয়ে ভিড় এড়াচ্ছেন। গত দুই বছর করোনা ও লকডাউনের কারণে বাজার একেবারেই শেষ। আর চলতি বছরও অবস্থাটা খুব ঢিলে ঢালা। যে রকম থাকার কথা সেরকম নেই।’ যদিও হাতে এখনো প্রায় দশটি রোজা বাকি আছে, কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কোন মিরাক্যাল তিনিও আশা করছেন না।
নিউমার্কেট এলাকায় ফুটপাতে চুড়ি-মালার ব্যবসা করে আসছেন আক্তার হোসেন নামে এক বয়স্ক ব্যাক্তি। তিনিও বলেন, ‘ব্যবসা একেবারই ভালো নয়। দুই বছর আগেও ঈদের সময় বাংলাদেশি পর্যটকের যে ঢল থাকতো, তা একেবারেই নেই। ফলে আমাদের ব্যবসাতেও ক্ষতি হচ্ছে। ভারত সরকার টুরিস্ট ভিসা চালু করায় বাংলাদেশ থেকে পর্যটকরা আসলে ব্যবসা কিছুটা লাভের মুখ দেখতে পারে। কিন্তু তা না হলে সমস্যা থেকেই যাবে।’
চুড়িমালা ব্যবসায়ী শাহনাজও বলেন, ‘স্থানীয় মানুষের হাতে অর্থ নেই, ফলে আমাদের তাকিয়ে থাকতে হয় বিদেশি পর্যটকদের দিকে। কিন্তু বাইরের লোক আসছে না, বাংলাদেশ থেকেও পর্যটকরা আসছেন না। ফলে ঈদের বাজারও মন্দার দিকে।’
একে পর্যটকদের খরা, তার ওপর অন্যবারের তুলনায় জিনিসপত্রের দাম এবার বেশ খানিকটা বেশি হওয়ার কারণে অসুবিধায় ব্যবসায়ীরা। দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে আসাও পর্যটকরাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
নিউমার্কেটের হোটেলে অবস্থান করা ঢাকার বাসিন্দা এস.এম. সাইদুল ইসলাম নামে এক পর্যটক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগে যে দামে জিনিসপত্র কিনেছি, এখন সেই জিনিসের দাম প্রায় তিনগুণ বেশি। কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশে যে জিনিস দশ টাকা এখানে তার দাম বিশ রুপি। আসলে ঈদের আগে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ এখানে আসেন, মূলত শপিং করতে। কারণ তাদের আশা থেকে এখানে কম দামে ভাল পণ্য পাওয়া যাবে। কিন্তু এখানে এসে দেখা যায় জিনিসের মান খারাপ, দামও বেশি।’
একই অভিযোগের সুর বাংলাদেশি পর্যটক ঝুমার গলাতেও। তিনি বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশের তুলনায় এখানকার পণ্যের গুণগত মান ভাল থাকায় এখানে কেনাকাটা করতে আসা। কিন্তু গত বছরের তুলনায় এবার পণ্যের দাম অনেক বেশি। এর জন্য দায়ী হয়তো আমরাই। কারণ আমরা বিদেশ থেকে আসি, তাই আমাদের কে লক্ষ্য করেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হয়ে থাকে। তবে এরপরেও বাংলাদেশ থেকে পর্যটকরা আসছে, আগামী দিনেও আসবে।
তবে শুধু পোশাক, সাজগোজের আইটেমই নয়, এমনকি দাম বেড়েছে পাতিলেবুরও। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা সাধারণত সরবত খেয়েই দিনের উপবাস ভাঙেন। কিন্তু পাতি লেবুর দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে নিউমার্কেট এলাকায় সরবতের দোকানগুলিতেও সেই চেনা ভিড় উধাউ। পাতিলেবুর শরবত খেতেও দশবার ভাবতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
এদিকে বাংলাদেশি গ্রাহকদের দিকে কার্যত পথ চেয়ে বসে আছে কলকাতার নামী বেসরকারি হাসপাতালগুলিও। এখানকার ১০-১৫ শতাংশ রোগীই বাংলাদেশি, ফলে ওই হাসপাতালগুলির আয়েরও একটা বড় উৎস তারা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর গত তিন মাস ধরে কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালগুলি পরিষেবা প্রদান স্বাভাবিক হওয়া শুরু করলেও বাংলাদেশি রোগীদের তেমন একটা ভিড় নেই। অতিমারি শুরুর আগে যে সংখ্যায় বাংলাদেশি রোগীরা এখানে আসতেন, দুই বছর পরেও বর্তমানে সেই সংখ্যাটা এখনও প্রায় অর্ধেক।
হাসপাতালগুলির অভিমত, ১ এপ্রিল পর্যন্ত মেডিকেল ভিসাধারী ব্যক্তিদের সড়ক পথে আসার অনুমতি না দেওয়া, বিমানের তুলনামূলক বেশি ভাড়া ও পর্যাপ্ত পরিমাণ বিমান না চলাচল করা, সর্বোপরি ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে আসা ব্যক্তিদের চিকিৎসার সুযোগ না মেলার কারণেই প্রতিবেশি দেশের রোগীদের চাপ কম।
পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র বলেন, ‘বর্তমানে বর্হিবিভাগে গড়ে ৪০-৪৫ জন রোগী এবং ২৫ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। কিন্তু আমরা আশা করছি ধীরে ধীরে এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে।’
এএমআরআই (আমরি) হাসপাতালের সিইও রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘মেডিকেল ভিসাধারীদের সড়ক পথে আসার অনুমতি দিলে, আমাদের আশা কলকাতার তিনটি ইউনিট মিলিয়ে বর্হিবিভাগে গড়ে ১৫০০-১৬০০ রোগীর উপস্থিতি থাকবে এবং ১০০ জন রোগী ভর্তি হবেন। কিন্তু যারা ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে আসছেন তাদেরকে এখনও পর্যন্ত চিকিৎসার কোন অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। না হলে রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে।’
করোনার আগে মেডিকা হাসপাতালেও বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা ছিল শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ। ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ১৫০ জন রোগী দেখা হতো। এখন সেই সংখ্যাটা নেমে ৮০ হয়েছে। এই কথা জানিয়েছেন হাসপাতালের চেয়ারপার্সন অলোক রায়।
‘রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইন্সিটিউট অব কার্ডিয়াক সায়েন্সেস’ (আরটিআইআইসিএস বা যা দেবী শেঠি হাসপাতাল নামে পরিচিত) হাসপাতালের আঞ্চলিক প্রধান আর. ভেঙ্কটেশ বলেন, ‘গত মার্চে বর্হিবিভাগে আনুমানিক ১৫০০ রোগী ছিল এবং ৬০ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং তারা সকলেই বাংলাদেশের। যদিও এই সংখ্যাটা করোনার আগে বাংলাদেশি রোগীদের উপস্থিতির শতকরা মাত্র ৪০ ভাগ।’
বিডি প্রতিদিন/হিমেল
এই বিভাগের আরও খবর