ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধিতে দেশটির মিজোরাম-বাংলাদেশ সীমান্তেও এবার সীমান্ত হাট চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। চার দিনের মিজোরাম সফর শেষে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান মন্ত্রী। এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী ২২ থেকে ২৫ এপ্রিল মিজোরাম রাজ্য সফর করেন। এ সময় তিনি মিজোরামের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বর্ডার হাটের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেন।
এছাড়াও দক্ষিণ মিজোরামের লুংলেই জেলার কাওরপইুছুয়া এবং বাংলাদেশের তেগামুখ সীমান্তে ‘সুসংহত চেক পোস্ট’ (আইসিপি)-এর অবকাঠামোর কাজ খতিয়ে দেখেন মুনশি। সোমবার মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা’র সাথেও সাক্ষাত করেন টিপু মুনশি। মিজোরামের সরকারি বাংলোতে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মিজোরামের বাণিজ্যমন্ত্রীসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তারাও। ছিলেন টিপু মুনশির সাথে যাওয়ার কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তাও।
বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ ও মিজোরাম সরকারের তরফে ‘সুসংহত চেক পোস্ট’ (আইসিপি), সড়ক যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেয়া হয় দুই সরকারের তরফে। ওই বৈঠক শেষে সোমবার দুই পক্ষের তরফে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন ‘ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সাথে বিশেষ করে উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সাথে উন্নততর সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কাজ করে চলেছে। মিজোরামের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে, এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, উত্তরপূর্ব ভারতের এই রাজ্যটিতে বাংলাদেশের তৈরি রেডিমেড পোশাক, নির্মাণ সামগ্রী, প্লাস্টিক, খাদ্যদ্রব্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একইসাথে বাংলাদেশও পাথর, সবজি, হলুদ, আদা, গোলমরিচ ও বাঁশজাত পণ্য মিজোরাম থেকে আমদানি করতে পারে। যদিও স্থানীয় মানুষদের চাহিদা অনুযায়ী বাণিজ্যিক পণ্য বিবেচনা করা হবে। সেক্ষেত্রে সীমান্ত হাট চালু হলে উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য জোরদার হতে পারে।’
‘সড়ক পরিবহন ও নৌপথের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও মিজোরামের বাণিজ্য করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সেলক্ষ্যে আমরা সড়ক যোগাযোগ ও জলপথ পরিবহন উন্নত করব।’ বাণিজ্যমন্ত্রীর দাবি ‘অর্থনীতিই হোক বা মাথা পিছু আয়- সবদিক থেকেই বাংলাদেশ ভারতের থেকে তুলনামূলক সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করছে।’
মিজোরামের বাণিজ্যমন্ত্রী জানান ‘চট্টগ্রাম বন্দর ও জলপথ ব্যবহার করে দুই দেশের মধ্যেই বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া সীমান্ত হাট নির্মাণের ফলেও উভয় দেশই লাভবান হবে। প্রস্তাবিত সীমান্ত বাণিজ্য আনুষ্ঠানিকতা শুরুর জন্য রাজ্য সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে দক্ষিণ মিজোরামের লুংলেই জেলার কাওরপুইছুয়াকে সংযুক্ত করার জন্য খাওথলাংটুইপুই নদীর ওপর প্রস্তাবিত ৬৬০ মিটার কংক্রিট সেতুর কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে।
এদিকে দীর্ঘ দুই বছরের পর ভারতের মেঘালয়-বাংলাদেশ সীমান্তে একটি সীমান্ত হাট পুনরায় চালু করা হল। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) চালু হয় বালাট (মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলা)- লাউয়াঘর (বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলা) আন্তর্জাতিক সীমান্তে অবস্থিত সীমান্ত হাটটি। এছাড়াও আগামী ১২ মে রিঙ্গকু (মেঘালয়ের ইস্ট খাসি হিলস জেলা)-বাগান বাড়ি (বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের ডুয়ারা) এবং ১৬ মে নালিকাটা (মেঘালয়ের সাউথ ওয়েস্ট খাসি হিলস জেলা)-সায়দাবাদ (সুনামগঞ্জের তাহিরপুর) সীমান্তে দুইটি সীমান্ত হাট পুনরায় চালু হতে চলেছে। সম্প্রতি দুই দেশের যৌথ সীমান্ত হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি এই সীমান্ত হাটগুলি পুনরায় চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাতটি সীমান্ত হাট রয়েছে। আগামীতে আরও নয়টি নতুন সীমান্ত হাট পরিকল্পনাধীন রয়েছে।
আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য এবং জনগণের যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ করছে এই সীমান্ত হাট। এটি হল একটি প্রাণবন্ত কেন্দ্র যা মানুষের সাথে মানুষের সংযোগের প্রচার করে। যেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের স্থানীয় মানুষের স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কৃষি ও উদ্যানজাত পণ্য, ক্ষুদ্র কৃষি ও গৃহস্থালির পণ্য, গৌণ বনজ পণ্য, তাজা ও শুকনো মাছ, কুটির শিল্পের জিনিসপত্র, কাঠের আসবাবপত্র, তাঁত এবং হস্তশিল্পের জিনিসপত্র ইত্যাদি পণ্য বিক্রি করার সুযোগ পায়।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর