১৪ মে, ২০২২ ১৪:২০

পিকে হালদারের সহযোগীদের সম্পত্তির হদিস পশ্চিমবঙ্গে

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পিকে হালদারের সহযোগীদের সম্পত্তির হদিস পশ্চিমবঙ্গে

পিকে হালদার

পিকে হালদারের সহযোগীদের সম্পত্তির হদিস মিলল পশ্চিমবঙ্গে। বাংলাদেশে আর্থিক তছরুপের অভিযোগে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গায় অভিযান চালায় ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’ (ইডি)। গতকাল সকালে রাজ্যের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অশোকনগরের তিনটি জায়গায় অভিযান চালান ইডির কর্মকর্তারা। অশোকনগরের যে তিন জায়গায় অভিযান চালানো হয় এবং যাদের সন্ধানে ইডির এই অভিযান- তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মৎস্য ব্যবসায়ী সুকুমার মৃধা, প্রণব কুমার হালদার এবং স্বপন মিত্র। অশোকনগরের পাশাপাশি কলকাতায়ও এই তিনজনের বিভিন্ন ঠিকানায় অভিযান চালান ইডির তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তাতে বেশ কিছু নথিও উদ্ধার করে তারা। গোয়েন্দা সূত্রের খবর- এই তিনজনই বাংলাদেশের পলাতক রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার)-এর পরিচিত ও সহযোগী। ইতোমধ্যেই পিকে হালদারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ একাধিক মামলাও করা হয়েছে বাংলাদেশে। এবার তার ও সহযোগীদের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির খোঁজ করছে ভারতের তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তাদের সন্দেহ বাংলাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে পিকে হালদারের জালিয়াতের জাল বিস্তৃত পশ্চিমবঙ্গেও। গতকাল সকালে একাধিক জায়গায় ইডি অভিযান চালালে বেআইনি আর্থিক লেনদেন, ব্যাংক জালিয়াতি, অবৈধ পাচারের ঘটনা সামনে আসে। এদিন ওই তিনজনের বাড়ি থেকে ইডির কর্মকর্তারা বেশ কিছু নথি সংগ্রহ করে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে স্বপন মিত্র নামে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে ইডির কর্মকর্তারা আরও বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, এই স্বপন মিত্র পিকে হালদারের হুন্ডির অর্থ পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত। কীভাবে হুন্ডির মাধ্যমে এ দেশে রুপি আসত, কোন কোন ব্যবসায় অর্থ খাটানো হতো- এই বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করছে ইডি। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী বলে পরিচিত মৎস্য ব্যবসায়ী সুকুমার মৃধা। মৎস্য ব্যবসার আড়ালেই হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে অর্থ নিয়ে আসতেন এবং সেই অর্থ লাগানো হতো জমি কেনার কাজে। হুন্ডির মাধ্যমে কোটি কোটি অর্থ বাংলাদেশ ও সংলগ্ন এলাকায় খাটাত সুকুমার। অশোকনগরে তার নামে ও বেনামে একাধিক বাড়ি ও দোকান রয়েছে বলে জানা গেছে। আদতে বাংলাদেশি সুকুমার মৃধার ব্যবসায়ে অনেক প্রভাশালী ব্যক্তি অর্থ খাটাতেন। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার এক মন্ত্রীর সঙ্গেও তার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল বলে জানা গেছে।
গতকাল সকালে অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুকুমারের বাড়িতে ইডির কর্মকর্তারা গিয়ে তাকে পাননি। এদিন তার বাড়ির ফটক খুলে দেন সুকুমারেরই আত্মীয় সঞ্জীব হাওলাদার। গণমাধ্যমকে তিনি জানান, ‘মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে অশোকনগরের বাড়িতে আসতেন সুকুমার। শেষবার তিন বছর আগে ওই বাড়িতে এসেছিলেন। বাড়ির চাবি সঞ্জীবের কাছে রেখে গিয়েছিলেন সুকুমার। এদিন তার খোঁজে ইডির কর্মকর্তারা এসে বাড়ি খুলতে বলেন এবং সঞ্জীব দরজা খুলে দেন। যদিও সঞ্জীবের দাবি বাড়ি থেকে সন্দেহজনক কিছুই পাননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তবে বাংলাদেশে সুকুমারের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ থাকার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।

অন্যদিকে আরেক অভিযুক্ত পিকে হালদারের আত্মীয় প্রণব হালদারের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়। অশোকনগরের নবজীবন পল্লীতে প্রণবের প্রাসাদোপম বাড়িতে অভিযান চালালে হতবাক হয়ে যান ইডির কর্মকর্তারা। প্রণবের দুই ছেলেকেও দীর্ঘক্ষণ জেরা করেছে ইডি। নিজে সাবেক সরকারি কর্মচারী হলেও এক ছেলে সেনাবাহিনীতে কর্মরত, দ্বিতীয়জন বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। এমন এক পরিবারের চার বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ এই প্রাসাদোপম বাড়ি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে আন্তর্জাতিক হুন্ডি চক্র অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিষয়টি বাংলাদেশের তরফে ভারত সরকারকেও জানানো হয়েছে। এরপরই সক্রিয় হয়ে ওঠে ইডি। সেক্ষেত্রে আর্থিক তছরুপের মামলায় জড়িত সন্দেহে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তাদের সহযোগীরা পশ্চিমবঙ্গে আত্মগোপন করে থাকার সম্ভাবনা থাকায়, সেই সব সম্ভাব্য স্থানে ইডির এই অভিযান। এদিন বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে এই অভিযান চালানো হয়।

সুকুমার মৃধার বাড়ি সিলগালা : প্রাথমিক তদন্তে আর্থিক অসঙ্গতি পাওয়ায় অভিযুক্ত সুকুমার মৃধার বাড়ি সিলগালা করে দিয়েছেন ইডির কর্মকর্তারা। বাড়ির প্রধান গেটে একটি নোটিসও টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর