বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

কমছে পানি, বাড়ছে ভাঙন সারা দেশে পাঁচজনের মৃত্যু

কমছে পানি, বাড়ছে ভাঙন সারা দেশে পাঁচজনের মৃত্যু

কুড়িগ্রামে শিশুসহ দুজন, রাজবাড়ীর পাংশায় দুই শিশু ও জামালপুরের ইসলামপুরে বন্যার পানিতে ডুবে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ফেরিঘাট এলাকায় পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। রো রো ফেরিঘাট ভেসে যাওয়ায় এ রুটে ফেরি বন্ধ রয়েছে। উভয় পাড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। এদিকে জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলে যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপকহারে বেড়েছে ভাঙন। বিভিন্ন জেলায় এখনো কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দিন পার করছে। সেখানে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে, একই সঙ্গে বাড়ছে পানিবাহিত রোগবালাই। দুর্গতরা পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রাজবাড়ী : পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নে গতকাল বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এরা হলো একই গ্রামের আইনদ্দিন মিয়ার মেয়ে সেতু (৭) ও শুকুর শেখের মেয়ে মারুফা (৮)। এলাকাবাসী জানায়, দুপুরে ওই দুই শিশু বন্যার পানিতে খেলা করছিল। হঠাৎই তারা ডুবে যায়। বিকালে তাদের লাশ ভেসে ওঠে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো ইসহাক আলী (৪)। সোমবার বাড়ির আঙিনায় খেলতে গিয়ে অথই পানিতে তলিয়ে মারা যায় সে। অন্য মৃতের নাম মমিনুল হক (৩০)। তিনি সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর কুমরপুরের শমসের আলীর ছেলে। এদিকে, ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমোর ও ফুলকমরসহ সব কটি নদী-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।
জামালপুর : জামালপুরের ইসলামপুরে বন্যার পানিতে ডুবে সমজ উদ্দিন গেনা মুন্সি (৭০) নামে এক বৃদ্ধ মারা যান। গতকাল বিকালে উপজেলার চিনাডুলী ইউনিয়নের বলিয়াদহ ব্রিজের নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ডুবুরি দল। তার বাড়ি চিনাডুলীর দেওয়ানপাড়া গ্রামে।
মুন্সীগঞ্জ : গতকাল রাতে আবার পদ্মার ভয়াল ছোবলে মাওয়া ঘাটের ১৪টি দোকানসহ বিস্তীর্ণ এলাকা মুহূর্তের মধ্যে বিলীন হয়ে যায়। এর আগের দিন তিন নম্বর রো রো ফেরি ঘাটটি পদ্মাগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এখন মাওয়া ঘাটে শুধু এ কে টাইপ ও ডাম্ব ফেরি চলাচল করছে। বর্তমানে ১ ও ২ নম্বর ঘাট দিয়ে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল করলেও উভয় পারে রয়েছে তীব্র যানজট। গতকাল সারা দিন মাওয়া ঘাটে ব্যাপক যানজট ছিল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন দক্ষিণবঙ্গের ২৩ জেলার যাত্রীরা।
সিরাজগঞ্জ : যমুনার পানি কমলেও নদীতীরবর্তী চৌহালীতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। চৌহালী উপজেলা সদরসহ বোয়ালকান্দি থেকে পাতরাইল পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার জুড়ে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস, মসজিদ, পুরাতন কোর্ট ভবন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক-তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিশেষ করে উপজেলা সদরসহ আশপাশ এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। হুমকির মুখে রয়েছে কারিগরি কলেজ ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টারসহ আশপাশের বসতভিটা। এ ছাড়াও ভাঙনে খাসকউলিয়া, জোতপড়া, বোয়ালকান্দি, চৌবাড়িয়া, খাসপুকুরিয়া, পাতরাইল, শৈলজানা, বাঘুটিয়া, মেটুয়ানী, খাসধলাই, চরসলিমাবাদ, আটাপাড়া, মাকরকোল গ্রামের পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর ও বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে এবং প্রতিদিনের ভাঙনে বসতভিটা যমুনায় বিলীন হচ্ছে।
ফরিদপুর : সদরপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। সাহায্যের জন্য চলছে আহাজারি। গরু-ছাগল নিয়ে পানিবন্দী মানুষ খাদ্য সংকটেও পড়েছে। বন্যার পাশাপাশি নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। গত ১৫ দিনে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁর ভাঙনে পাঁচটি ইউনিয়নের ৬১৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ১ হাজার একর ফসলের মাঠ বিলীন হয়ে গেছে।
মাদারীপুর : শিবচরের কাওড়াকান্দি ঘাট এলাকায় দুই কিলোমিটারের বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
শরীয়তপুর : শরীয়তপুরে বন্যার পানিতে ১ হাজার পুকুর তলিয়ে গেছে। জেলা মৎস্য কার্যালয়, মৎস্য চাষি ও মৎস্য চাষি সমিতির জানায়, জেলায় ১৫ হাজার ১৮২টি মাছ চাষের পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও জাজিরা উপজেলার প্রায় ১ হাজার পুকুরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। সব মাছ ভেসে গেছে। এলাকাগুলোর ছয় শতাধিক মাছ চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করায় এখন দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
বগুড়া : সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে রোহদহ বাজারের কাছে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় বাড়িঘর ও আবাদি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। আবারও দেখা দিয়েছে ভাঙন। সারিয়াকান্দির বন্যাদুর্গত এলাকায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট পড়েছে। প্রতিদিন সরকারি ও বেসরকারিভাবে বানভাসি মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

সর্বশেষ খবর