দিনাজপুর শহরের জহুরুল ইসলাম। তিনি তাঁত থেকে তৈরি করছেন জুট বা পাটের ডোরম্যাট। শুরুতে সমস্যা হলেও তার কর্ম-তৎপরতায় চমক সৃষ্টি হয়েছে। জুটের এই ডোরম্যাটের চাহিদা এখন শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও তৈরি হয়েছে। দিনাজপুরের এই ডোরম্যাট এখন রপ্তানি হচ্ছে সুইডেন, জার্মানি ও জাপানে।
দরিদ্র জহুরুল এখন একটি তাঁত থেকে ১৮টি তাঁতের মালিক হয়েছেন। তার কর্মযজ্ঞে চাকরি করছে ২২ জন কর্মচারী। উদ্যোক্তা জহুরুল বলেন, গত ৭ আগস্ট ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার ১২শ পিচ জুটের ডোরম্যাট হ্যান্টার্স-এর মাধ্যমে বিদেশে ডেলিভারি দিয়েছি। তিন মাসে এসব মালামাল তৈরি করে ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। অর্ডার একটার পর একটা আসছেই। দিন দিন ব্যবসার পরিধি বাড়ছে। তিনি জানান, তার তাঁতকলে জুট থেকে ডোরম্যাট, ডাইনিং ম্যাট, ফ্লোরম্যাট, দরজার পর্দা, সোফার কাপড়, থ্রি-পিস, টাওয়েল, গ্রামীণ চেক শার্ট কাপড়, পকেট রুমাল, ওড়না, বেড কভার ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। এ উদ্যোগের ব্যাপারে জহুরুল জানান, তার বাবা স্কুল শিক্ষক ছিলেন। তখন বাড়িতে তাঁত ছিল। এলাকায় আরও অনেকের তাঁত ছিল। কিন্তু সেগুলো টিকতে পারেনি। বিভিন্ন সমস্যায় এক সময় তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে এলাকার অন্য সবার তাঁত বন্ধ হয়ে গেলে নিজের পরিবারেও টানাপড়েন শুরু হয়। এ সময় জহুরুল এইচএসসি পাসের পর গাজীপুরের একটি টেক্সটাইলে চাকরি নেন। পরে ফিরে এসে একটি তাঁত চালু করেন। তৈরি করেন জুট দিয়ে পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি। এগুলো নিজেই দিনাজপুর শহরের মালদহপট্টির কাপড়ের দোকানে বিক্রি শুরু করেন। এভাবে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কাপড় তৈরি করে জেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঠাকুরগাঁওয়ের হ্যাডস-এর মাধ্যমে অর্ডার নেওয়া ও বিক্রি করা শুরু করেন। এক পর্যায়ে এ ব্যবসার প্রসার ঘটে। চাহিদা তৈরি হয় জুটের তৈরি পণ্যের। বিশেষ করে ডেরম্যাটে দারুণ চাহিদা সৃষ্টি হয়। এভাবে তিনি চমক সৃষ্টি করেছেন। তার একটি তাঁতের জায়গায় চালু হয়েছে ১৮টি তাঁত। জহুরুল বলেন, এখন আমার এখানে ২২ জন নারী-পুরুষ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এরই মধ্যে ঢাকার একটি বড় প্রতিষ্ঠান হ্যান্টার্স-এর মাধ্যমে বিদেশি অর্ডার নিয়ে সাপ্লাই দিচ্ছি। জাপান, জার্মানের পর সুইডেনের অর্ডার নিয়ে সাপ্লাই দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি এখন এ অঞ্চলের বেকারত্ব দূর করতে চাই। এলাকার তৈরি জিনিসের চাহিদা তৈরি করতে চাই।