শনিবার, ২১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে দলীয় কূটনীতি

দূরত্ব কমিয়ে ইতিবাচক সম্পর্কে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে দলীয় কূটনীতি

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কিছুটা দূরত্ব ছিল সব সময়ই। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। ক্রমশই সেই নেতিবাচক মনোভাব কেটে ইতিবাচক ধারায় ফিরছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের সম্পর্ক। সর্বশেষ তা স্পষ্ট হয়েছে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে একের পর এক জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকরের পরও মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের একটি বাক্যও উচ্চারণ না করা। আর তা সম্ভব হয়েছে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, যোগাযোগ বৃদ্ধি, দেশের স্বার্থ ঠিক রেখে ওই দেশগুলোর ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণ করার কাজগুলো গুরুত্বসহকারে সম্পন্ন করায়। স্পষ্ট ভূমিকা রেখেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কয়েক দফায় মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক দেশ সফর। আসছে ৪ থেকে ৬ জুন আবার সৌদি আরব সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ জুন জেদ্দায় সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। দলীয় সূত্রমতে, যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর ঢাকার রাজনৈতিক মহলে গুজব ছড়ানো হয় একটিও বিচার হলে মুসলিম বিশ্ব থেকে একঘরে হয়ে যাবে বাংলাদেশ। বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারকে মেনে নেবে না মধ্যপ্রাচ্য এবং বাংলাদেশিদের মধ্যপ্রাচ্য থেকে বের করে দেওয়া হবে। কিন্তু এর কিছুই হয়নি। বরং নজিরবিহীনভাবে মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান সফর করেছেন বাংলাদেশ। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কুয়েতের কোনো প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসেই ঢাকা সফর করেছেন। অন্যদিকে, ৫ জানুয়ারি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় দেশে অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকার টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। কিন্তু ঢাকার রাজনৈতিক মহল থেকে বলা হয়, বৈশ্বিক চাপে একদিনও ক্ষমতায় থাকতে পারবে না সরকার। কিন্তু কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়ানোর লক্ষ্য হিসেবে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক অব্যাহত রাখে সরকার। মূলত ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী এ বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম দিকে বিরোধী পক্ষ আন্তর্জাতিক যোগাযোগে সরকারে ভাটার টান পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করায় সরকার চ্যালেঞ্জ নিয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ভারত, চীন, জাপানসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করতে সক্ষম হয়। এরপর শুরু হয় আওয়ামী লীগবিরোধী দেশ হিসেবে পরিচিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা। গত ৩ মে বাংলাদেশ সফরে আসেন কুয়েতের প্রধানমন্ত্রী শেখ জাবের আল সাবাহ। ওই সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সামরিক খাতে প্রশিক্ষণ, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা সহজিকরণ ও ঋণ চুক্তিসহ চারটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে।  জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সৌদি সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হচ্ছে সৌদির শ্রমবাজার সম্পূর্ণ উন্মুক্ত, বিনিয়োগ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে অন্যান্য সহযোগিতা। সেখানে সৌদি বাদশাহ ছাড়াও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ ও উপ-যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি সরকার ও রাজপরিবারের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও বৈঠক করবেন। এর আগে ২০০৯ সালে তিনি দ্বিপক্ষীয় সফরে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। গত কয়েক বছরে ঢাকা ও রিয়াদের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ ও শক্তিশালী হয়েছে। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়েও সফর হয়েছে। সৌদি আরবে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছেন। সৌদি শ্রমবাজারে আধা দক্ষ ও দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ সৌদিতে আরও বেশি হারে জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চায়। সম্প্রতি সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে বাংলাদেশ-সৌদি আরব অংশীদারিত্বও বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে ২০১৪ সালের অক্টোবরে আরব আমিরাত সফরে অংশীদারিত্ব বাড়ায় বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গেই আওয়ামী লীগের সম্পর্ক খারাপ ছিল না। তবে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর কিছুটা নেতিবাচক ছিল এ কথা সত্য। কিন্তু বর্তমানে সেই পরিস্থিতি নেই। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এখন আর বিএনপিকে বিশ্বাস করবে না। কারণ বিএনপি নেতা এম আসলাম চৌধুরী ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকের কারণেই তারা আর বিএনপিকে ভালোভাবে নেবে না।

সর্বশেষ খবর