রবিবার, ১২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

সিলেটের ঐতিহ্য আখনি ও পাতলা খিচুড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেটের ঐতিহ্য আখনি ও পাতলা খিচুড়ি

ছোলা, পিয়াজু, বাখরখানি, আলুর চপ, ডিম চপ, বেগুনি, আলুনি, শাকের পাকুড়া, সবজি পাকুড়া, বিভিন্ন ধরনের শাকের বড়া, শরবত, ফিরনি— সিলেটি ইফতারের আইটেম। কিন্তু এর সঙ্গে সিলেটি ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে আখনি ও পাতলা খিচুড়ি। ইফতারিতে যত মুখরোচক আইটেমই থাকুক না কেন, সিলেটের রোজাদাররা আখনি কিংবা খিচুড়ি ছাড়া স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। রমজান মাসের ইফতারে সিলেটের সর্বত্রই এ আইটেম রান্না করা হয়। সুগন্ধি চিকন চালের সঙ্গে গাওয়া ঘি, কালিজিরা ও মেথিসহ নানাজাতের মসলা দিয়ে রান্না হয় খিচুড়ি। স্বাদে ভিন্নতা আনার জন্য অনেকেই এতে শাকসবজি কুচি করে মিশিয়ে থাকেন। অনেকেই আবার খিচুড়ির সঙ্গে গরু বা মুরগির মাংস, ছোলা প্রভৃতিও মিশিয়ে থাকেন। তবে সাধারণ চাল দিয়েও খিচুড়ি রান্না করা হয়।

অন্যদিকে অনেকটা বিরিয়ানির মতো আখনি মসলাবহুল খাবার। খেতে কিছুটা ঝাঁঝালো। ইফতারের সময় সিলেটবাসীর আখনি না হলে যেন চলেই না। আখনি এখন রীতিমতো ইফতারের আভিজাত খাদ্য হয়ে উঠেছে। ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় একসময় ঘরে ঘরে তৈরি হলেও সিলেটে আখনি বাণিজ্যিকভাবেও বিক্রি হচ্ছে। পোলাও চাল ও গরুর মাংস দিয়েই মূলত আখনি তৈরি করা হয়। খাসির মাংস দিয়ে খাসির আখনি এবং মোরগের মাংস দিয়ে মোরগের আখনিও করা হয়। মাংসের ভিন্নতা ও মানভেদে আখনি প্রতি কেজি ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারের একটি অভিজাত ইফতারির দোকানে ইফতারি কিনতে আসা রইছুল হোসেন বলেন, ‘ইফতারিতে আখনি বা খিচুড়ি যে কোনো একটা না থাকলে চলে না। আড়াইশ টাকা কেজি হিসেবে খাসির আখনি কিনেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো কোনো দিন বাসায় আখনি বা খিচুড়ি রান্না করা হয়। অনেক সময় বাইরের বিভিন্ন ইফতারির দোকান থেকেও এগুলো কিনে নিয়ে যাই।’ নগরীর জেলরোড এলাকার গৃহিণী আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘বাসায় প্রায় প্রতিদিনই খিচুড়ি রান্না করি। বয়স্করা খিচুড়ি খেতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।’ এদিকে সিলেটে আত্মীয়স্বজনের বাসাবাড়িতে অতিথিদের ইফতার করানোর রেওয়াজ বহু পুরনো। এসব অতিথির জন্যও ইফতারিতে খিচুড়ি কিংবা আখনি রান্না করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে আখনি, খিচুড়ি দুটোই থাকে। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে ইফতার পাঠানোর ক্ষেত্রেও আখনি বা খিচুড়ি থাকাটা অনেকটা বাধ্যতামূলক।

সর্বশেষ খবর