বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

বাংলার ‘টাইটানিক’

বিলাসবহুল সুন্দরবন-১০-এ রয়েছে লিফট, সিসিইউসহ নানান সুবিধা
পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকা টু বরিশাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বাংলার ‘টাইটানিক’

নদ-নদীর দেশ বরিশাল থেকে রাজধানী ঢাকায় যাওয়ার প্রধান নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী মাধ্যম নৌপথ। এ কারণে বরিশাল-ঢাকা রুটে একের পর এক সংযোজন হচ্ছে অত্যাধুনিক লঞ্চ। এই ধারাবাহিকতায় আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে এমভি সুন্দরবন-১০ নামে একটি বিশালাকার অত্যাধুনিক নৌযান। সমুদ্রগামী জাহাজের আদলে নির্মিত এই নৌযানটিতে প্রথমবারের মতো লিফট সংযোজন করা হয়েছে। চারতলা নৌযানটিতে শারীরিকভাবে অক্ষম, প্রতিবন্ধী এবং রোগীদের সুবিধার্থে লিফট সংযোজনের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একজন চিকিৎসক, ফার্মেসিসহ হূদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য লঞ্চে করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে লঞ্চে বেবি প্লে-গ্রাউন্ড, ফুড কোড এরিয়া, কফি হাউস এবং ওয়াইফাই সুবিধাসহ রাখা হয়েছে নানা বিনোদনের ব্যবস্থা। যাত্রীদের নিরাপত্তায় পুরো নৌযানটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় রাখা হচ্ছে ২৫০টি লাইফ বয়া। যাত্রীদের জানমাল হেফাজতের জন্য রাখা হয়েছে একজন কমান্ডারসহ ছয়জন সশস্ত্র আনসার সদস্য। সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির পরিচালক আবুল কালাম ঝন্টু জানান, বিশেষজ্ঞ নৌ-স্থপতির নকশায় সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের প্যানেল প্রকৌশলীদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ৩৪০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৫৫ ফুট প্রস্থ  আকারের সুন্দরবন-১০ লঞ্চ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে দেশি-বিদেশি প্রযুক্তিনির্ভর লঞ্চটির শেষ মুহূর্তের রং ও সাজসজ্জার কাজ। লোয়ার ডেক, আপার ডেক, ৪০টি শোফা (বিলাস) এবং দুই শতাধিক প্রথম শ্রেণির কেবিন ছাড়াও ১৫টি ভিআইপি কক্ষে অনুমোদিত যাত্রী ধারণক্ষমতা এক হাজার ৪০০ জন। প্রথম শ্রেণির কেবিনগুলো করা হয়েছে তিন তারকা আবাসিক হোটেলের আদলে। দৃষ্টিনন্দন আসবাবপত্রে সাজানো হয়েছে প্রতিটি কক্ষ। প্রতিটি কেবিনের পাশেই রয়েছে সুবিশাল বারান্দা। সেখানে বসে নদী, আকাশসহ আশপাশের মনোরম প্রকৃতি উপভোগ করার ব্যবস্থা রয়েছে। কক্ষের ভিতরে রয়েছে টেলিভিশন। এ ছাড়াও ৫ শতাধিক টন পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে নৌযানটির। জার্মানির তৈরি ২ হাজার ৭৫০ অশ্বশক্তির দুটি মূল ইঞ্জিন ছাড়াও নৌযানটির প্রথম শ্রেণি ও ভিআইপি কক্ষসহ ডেক যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের জন্য তিনটি জেনারেটর সংযোজন করা হয়েছে। স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে একটি জেনারেটর। শক্তিশালী ইঞ্জিনের কারণে ৫ ঘণ্টায় বরিশাল থেকে ঢাকা কিংবা ঢাকা থেকে বরিশালের গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে লঞ্চটি। ইতিমধ্যে বরিশালের বিভিন্ন নদীতে লঞ্চটি পরীক্ষামূলকভাবে ৩০ ঘণ্টা চালানো হয়েছে। এর হুইল হাউসে (চালকের কক্ষ) স্থাপন করা হয়েছে দ্বৈত পদ্ধতির রাডার-সুকান ‘ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক’ ও ম্যানুয়াল। আধুনিক রাডার ছাড়াও জিপিএস পদ্ধতি সংযোজন করা হয়েছে। ফলে লঞ্চটি চলাচলরত অবস্থায় নৌপথের এক বর্গকিলোমিটারের মধ্যে গভীরতা ছাড়াও এর আশপাশের অন্য যে কোনো নৌযানের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারবে। এমনকি ঘন কুয়াশার মধ্যেও নির্বিঘ্নে চলতে পারবে লঞ্চটি। লঞ্চটি পরিচালনার জন্য প্রথম শ্রেণির দক্ষ মাস্টার ও ইঞ্জিন কর্মকর্তাসহ মোট ৪০ জন বিভিন্ন শ্রেণির ক্রু নিয়োগ করা হয়েছে। নৌযানটির সব শ্রেণির যাত্রী ভাড়া অন্যান্য লঞ্চের মতোই। বরিশাল নগরীর বেলতলা ফেরিঘাট সংলগ্ন সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির নিজস্ব শিপইয়ার্ডে টানা ৩২ মাস ধরে ২০০ জন শ্রমিক ‘বাংলার টাইটানিক’ হিসেবে পরিচিত জাহাজটি নির্মাণ করেছে। আগামী ২৩ জুন দোয়া-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে বরিশাল থেকে যাত্রী নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে আধুনিক নৌযানটি। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ২৫ জুন (শনিবার) বিকালে ঢাকার সদরঘাট টার্মিনালে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানসহ বরিশালের সংসদ সদস্যদের। এ ছাড়া সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর এম জাকিউর রহমান ভূঁইয়া, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মোফাজ্জেল হক, লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহম্মেদ বীরবিক্রমসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর