বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি শিগগিরই

—প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি শিগগিরই

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একুশের প্রথম প্রহরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান —বাংলাদেশ প্রতিদিন

যে জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের সঙ্গে নিম্ন মধ্যম শব্দটি থাকতে পারে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতিমধ্যে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য যত রকমের শর্ত রয়েছে, তার সবই বাংলাদেশ পূর্ণ করেছে। ফলে বাংলাদেশ শিগগিরই উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবে। গতকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ আশা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থানটাকে উন্নত করতে পারব, সেই পর্যায়ে এসে গেছি। যে কয়টি ক্যাটাগরিতে অর্জন থাকলে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেতে পারি, তার প্রতিটি শর্তই বাংলাদেশ এখন পূর্ণ করেছে। কাজেই আমাদের মর্যাদাটা আরও একধাপ ওপরে এগিয়ে নিতে পারব।’

শ্রীলঙ্কায় এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা সেখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের কিছু কিছু চিত্র দেখেছি। এ জন্য সত্যিই আমরা আনন্দিত। জাতিসংঘ সদস্যভুক্ত সব দেশে যেন এ দিবসটি পালিত হয়, আমরা এর জন্য তথ্য সব জায়গায় পাঠিয়েছি। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকেও প্রতিবছর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তাহলে সবাই বিষয়টি জানতে পারবে।’ পাকিস্তান সরকারের সময় বাংলা ভাষা ব্যবহারে বিভিন্ন বিধিনিষেধের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলা ভাষা নিয়ে অনেক যন্ত্রণা আমাদের সইতে হয়েছে। ভুক্তভোগী হিসেবে আমাদের বিষয়টি মনে আছে। একসময় আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো বাংলা অক্ষরে বাংলা ভাষা লেখা যাবে না। আরবি হরফে বাংলা লিখতে হবে— এ দাবির প্রতিবাদ করল বাঙালিরা। তারপর বলা হলো, রোমান হরফে বাংলা লিখতে হবে। এরও প্রতিবাদ হলো। তারপর এলো রবীন্দ্রনাথ পড়া যাবে না। তিনি হিন্দু। এ জন্য তার লেখা পড়লে আমাদের মুসলমানিত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের লেখাগুলোকে মুসলমানি ভাষা দেওয়া হবে। তার ‘মহাশ্মশান’ হয়ে গেল ‘গোরস্থান’। ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি’-কে পরিবর্তন করা হলো। লেখা হলো, ‘ফজরে উঠিয়া আমি দেলে দেলে বলি।’ আমাদের ছাত্রজীবনে কত রকমের যন্ত্রণা ভোগ করেছি।’

রক্তের অক্ষরে ভাষার মর্যাদাকে রক্ষার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। এটা আমাদের জন্য বিরাট গর্বের। কাজেই এই ভাষার ব্যবহার ও চর্চা ভুলে গেলে চলবে না। বাঙালি হিসেবে সব ঐতিহ্য আমাদের ধারণ করতে হবে। চর্চা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমি প্রতিবছর জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে থাকি।’ একুশের পথ ধরে স্বাধীনতা এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা জাতিকে ধ্বংস করার জন্য তার ভাষার ওপর, সংস্কৃতির ওপর আঘাত করা হয়। সেই ষড়যন্ত্রটা পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের ওপর করেছিল। এরই পথ ধরে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে মর্যাদা পেয়েছি। রাষ্ট্র পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন না করলে পাকিস্তান শাসনতন্ত্রে বাংলা ভাষা মর্যাদা পেত না। তখন ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ঘোষণা করে। শহীদ মিনার গঠন করে। এ জন্য বাজেটও করা হয়। তবে আইয়ুব খান সামরিক শাসন দেওয়ার পর সেটা তখন এগোয়নি।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যে আদর্শ নিয়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। বাঙালি জাতি বিশ্ব সমাজে মাথা উঁচু করে মর্যাদার সঙ্গে চলবে। বাংলাদেশ হবে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। আমরা তা গড়ে তুলতে পারব। কারণ আজকে আমরা সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর