শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

বসুন্ধরায় উদ্যোক্তাদের ভিড়ে জমজমাট পোলট্রি মেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বসুন্ধরায় উদ্যোক্তাদের ভিড়ে জমজমাট পোলট্রি মেলা

রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) চলছে তিন দিনব্যাপী ১১তম পোলট্রি মেলা। গতকাল দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তাদের পদচারণে জমজমাট হয়ে ওঠে মেলা। সরেজমিন দেখা গেছে, মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উদ্যোক্তা, খামারি ভিড় করেছেন। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, দেশের অন্যান্য শিল্পের মতো পোলট্রি হতে পারে অন্যতম রপ্তানি খাত। সরকারের সহযোগিতা পেলে এ খাত থেকে আয় হতে পারে ভালো রকম বৈদেশিক মুদ্রা। সরকার যদি বিশেষ নজর দিয়ে এ খাতের শিল্পমালিকদের সহযোগিতা করে তাহলে এ খাত কর্মসংস্থানেরও শীর্ষে অবস্থান করবে। মেলায় দেখা গেছে, দর্শনার্থীরা খামার তৈরির সরঞ্জামাদি, পোলট্রি খাদ্যসামগ্রী উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন। কেউ খোঁজ নিচ্ছেন মুরগি-গরুসহ গবাদিপশুর ভ্যাকসিনের বিষয়ে। এমনই একজন খামারি উদ্যোক্তা টাঙ্গাইল থেকে আসা জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘২০১১ সালে আমি ১ হাজার ব্রয়লার মুরগি দিয়ে ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে ফার্মে ৫ হাজার ব্রয়লার মুরগি আছে। আমার নিজের দোকানের খাবার দিয়ে ব্রয়লার পালন করি। মেলায় এসে অনেক পোলট্রি ফিডের কোম্পানির কার্ড নিয়ে গেলাম। যে কোম্পানির খাবার বিক্রি করলে বেশি লাভ হবে এবং মুরগি দ্রুত বাড়বে প্রয়োজনে সেই কোম্পানির খাবার বিক্রি করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে বেশি লাভ করতে পারছি না। মুরগির বাচ্চা ও খাবারের দাম এখন অনেক বেশি। এ বিষয়ে সরকারকে বিশেষ নজর দেওয়া উচিত। ব্যাংকগুলো এখন সহযোগিতা করতে চায় না। তারা ঝুঁকি মনে করে। কিন্তু দেশের পুষ্টি চাহিদার প্রধান খাত হতে পারে পোলট্রি শিল্প। রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম হতে পারে।’ মমিন নামে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আরেক পোলট্রি খামার মালিক বলেন, ‘বাংলাদেশে পোলট্রি ব্যবসায় ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা রয়েছে। অল্প পুঁজিতে এ ব্যবসা করা যায়। সেজন্য এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি শেড করেছি। কিন্তু এখনো সব কাজ শেষ হয়নি। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি কাজে এসেছিলাম, মেলার কথা শুনে এখানে এলাম। এখানে নানা তথ্য পাচ্ছি।’

মেলায় বিভিন্ন স্টলের বিক্রয় কর্মীরা বলেন, দর্শনার্থীর আগমন অনেক বেশি। দর্শনার্থীরা পশুখাদ্য, পশুর রোগবালাই ও এর ওষুধের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত জানছেন। একটি মুরগি বা গরুকে সব মিলিয়ে ১৪-১৫টি ভ্যাকসিন দিতে হয়। ভ্যাকসিনগুলো যেন তারা সঠিক সময়ে দিতে পারেন সে বিষয়েই স্টলে কথা বলছেন আগ্রহীরা। দেশে কৃষিজাত পণ্যের সঙ্গে পোলট্রি শিল্পের বিশাল এ প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হচ্ছে মেশিনারিজ, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর নানা ধরনের শিল্পপণ্য। এখানে ভোক্তা থেকে শুরু করে সারা দেশের উদ্যোক্তারাও এসেছেন। ঘুরে ঘুরে দেখছেন, কথা বলছেন।

 মেলার আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু উদ্যোক্তরা নন, সাধারণ গ্রাহকদের কাছে উৎপাদিত মাংস, ডিম প্রক্রিয়াজাতকরণ, পণ্যের মান কীভাবে রক্ষা করা হয়, পণ্য প্যাকেটজাত করা হয় এবং দেশে পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ বছর মেলায় বাংলাদেশসহ ভারত, থাইল্যাড, কোরিয়া, তাইওয়ান, চীন, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, জাপান, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ ২২টি দেশের প্রায় ৫০০ কোম্পানি ৮ শতাধিক স্টলে তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে।

তিন দিনব্যাপী এ মেলা যৌথভাবে আয়োজন করেছে ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) ও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। আজ মেলার সমাপনী দিন। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে মেলা, যা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।

সর্বশেষ খবর