মালয়েশিয়ায় গেলে শুরুতেই বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে স্কার্ফ পরিহিত করিৎকর্মা নারী কর্মকর্তাদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, শপিং মল, হোটেল-রেস্টুরেন্ট কিংবা ড্রাইভিং সিটে-সর্বত্রই নারীরা চালকের আসনে। শুধু মালয়েশিয়ান নারীই নয়, চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ, ইন্ডিয়া, নেপাল, পাকিস্তানি, শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেয়েদের দেখা যায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে। তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কেএলসিসি টাওয়ারের শপিং মলে দেখা মেলে এক বাংলাদেশি তরুণীর। তার নাম মুনিরা। পাঁচ বছর ধরে তিনি ওই শপিং মলে কাজ করছেন। সামাজিক বাধা পেরিয়ে মালয়েশিয়ায় এখন তিনি ‘হ্যান্ডসাম’ সেলারিতে কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ভালোই আছেন মালয়েশিয়ায়। এখানে নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই সবাইকে সম্মান করেন। কেউ কাউকে হেয় করেন না। নারীকে ভিন্ন চোখে দেখে না কেউ, কাজকে সবাই পছন্দ করেন। কুয়ালালামপুরের আম্পাং পয়েন্টে সামিয়া কাজ করেন একটি বেসরকারি অডিট ফার্মের হিসাবরক্ষক হিসেবে। তিনিও জানালেন, চাকরিটা তিনি এনজয় করছেন। সবারই সহযোগিতা পাচ্ছেন। দেশে মা-বাবার সঙ্গেও নিয়মিত কথা হচ্ছে। কার্যত, মালয়েশিয়ান নারীদের বড় অংশই দেশটির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। জানা যায়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ড্রাইভিং, শপিং মল, হোটেল-রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে সর্বত্রই নারীদের বিচরণ। মালয়েশিয়া পুলিশের বড় একটি অংশই নারী। তবে বাংলাদেশি কতজন নারী সেখানে কাজ করছেন, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। জানা গেছে, পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি নারী মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন। যা অন্য দেশের তুলনায় কম। ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ভারত, পাকিস্তানের নারী কর্মীদের চোখে পড়ে বেশি। জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নারী কর্মীদের একটি অংশ ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। বেসরকারি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তারা। পাঁচ তারকা হোটেলের রিসিপশনেও দেখা মেলে বাংলাদেশের নারীদের। তবে নারীদের ক্ষুদ্র একটি অংশ দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। কুয়ালালামপুরের আলোচিত-সমালোচিত এলাকা বুকিত বিন্তাংসহ বিভিন্ন এলাকায় বাংলাদেশি বেশকিছু মেয়েকে যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অফিসে কাজ দেওয়ার কথা বলে অনেকটা বাধ্য করেই তাদের বিপথগামী করা হচ্ছে। তাদের পাসপোর্ট দালালদের হাতে। জানা যায়, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নারীদের জন্য একটি চমৎকার কর্মপরিবেশ থাকলেও স্বদেশি দালালরাই তা নষ্ট করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর মনিটর করার পরামর্শ দেন প্রবাসীরা। এজেন্টগুলোর প্রতি কঠোর নজর রাখারও পরামর্শ তাদের। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনকে আরও জোরোলো ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান প্রবাসী বাংলাদেশিরা। কুয়ালালামপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মালয় নারীদের পোশাকে বিশেষ কোনো ভিন্নতা নেই। ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে পর্দা প্রথায় তাদের মধ্যে বাড়াবাড়ি কিছু চোখে পড়েনি। মেয়েদের মূল পোশাক বাজু কুরুং। এটিই মালয় নারীদের অফিশিয়াল পোশাক। মাথায় বিভিন্ন রঙের স্কার্ফ। হাতে বাহারি চুরিও পরতে দেখা যায় অনেককে। নানান রঙের পাথরের আংটি প্রায় সবার হাতেই। অফিস বা শিক্ষাঙ্গন ছাড়াও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা রেস্তোরাঁগুলোতেও মালয়ী নারীদের দেখা মেলে। তাদের পরনে জিন্সের প্যান্ট, টি-শার্ট বা শার্ট আর মাথায় স্কার্ফ। সকালে অফিস সময়ে দেখা যায় বিভিন্ন দিকে ছুটে চলছেন নারীরা। ব্যস্ত প্রাইভেট গাড়িগুলোর চালকের আসনে স্টিয়ারিং হাতে মালয়সহ বিভিন্ন দেশের নারী। বাসে নারী চালক আর হেলপারও। সিনেমা হলের টিকিট বিক্রিও করতে দেখা যায় নারীদের। তারা সবাই শালীন পোশাক পরেন। তবে অন্য ধর্মের নারীদের পোশাকে বিধি নিষেধ নেই। সবাই যার যার মতো করে পোশাক পরছেন। চীনা বা থাই মেয়েদের আঁটোসাঁটো হাফপ্যান্ট পরে চলাচল করতেও দেখা গেছে। এ নিয়ে কারও বাড়াবাড়ি নেই। কুয়ালালামপুরের সব মসজিদেই দেখা মেলে নারীদের। জুমার নামাজে দেখা যায় পুরুষদের চেয়ে নারীদের উপস্থিতি বেশি। সাবিহা সুবাং নামে এক মালয়েশিয়ান নারী জানান, আমরা ধর্মটাকে মেনে চলি। প্রতি ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। তবে এখানে চাইলেই কেউ ধর্ম নিয়ে মনগড়া এমন কিছু বলতে পারে না। সবাই যার যার ধর্ম মেনে চলেন। প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, মালয়েশিয়ান পুরুষরা খুবই অলস। তারা কাজ করতে চান না। অন্যদিকে নারীরা বেশি শিক্ষিত ও পরিশ্রমী। তারা বাংলাদেশিদের অনেক পছন্দ করেন। অনেক মালয়েশিয়ান নারী বাংলাদেশি ছেলেকে বিয়েও করেছেন। এমন একজন বাংলাদেশি যুবক মামুন বিন আবদুল মান্নান। ময়মনসিংহের নান্দাইলের এই যুবক জীবিকার তাগিদে পাড়ি দিয়েছিলেন মালয়েশিয়ায়। সেখানে প্রথমে পরিশ্রমের কাজ করতেন। এক পর্যায়ে তিনি নিজেই ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসা করতে গিয়ে পরিচয় হয় মালয়েশিয়ান তরুণী ব্যবসায়ী মাস পুষ্পাওয়াতি বিনতি হাজী সেলিমের সঙ্গে। অল্পদিনের পরিচয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। স্বামী-স্ত্রী মিলে ব্যবসার পরিধি আরও বাড়ান। শুরু করেন নতুন করে ব্যবসা। প্রায় দুই যুগ ধরে ভালোই আছেন মামুন দম্পত্তি।
শিরোনাম
- কাউখালীতে নাশকতার অভিযোগে আটক ৫
- কুমিল্লায় ৪ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলন
- সামরিক হস্তক্ষেপ চালালে ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটবে, মাদুরোর হুঁশিয়ারি
- মধ্যরাতে বাসা থেকে সাংবাদিককে তুলে নিল গোয়েন্দা পুলিশ
- জাতিসংঘ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিলে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের হত্যার হুমকি ইসরায়েলি মন্ত্রীর
- জাপানে ১৭০ ভবনে অগ্নিকাণ্ড
- শেখ হাসিনার পোর্ট্রেটে ফ্যাসিবাদের কালিমা
- ঘরে বসেই করা যাবে মেট্রোরেলের কার্ড রিচার্জ
- কানাডায় ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ মঞ্চায়নের ঘোষণা
- পোনা চাষে মাসে লাখ টাকা আয় বিশ্বনাথের দিলদারের
- যুক্তরাষ্ট্রে ১ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা সৌদি যুবরাজের
- টিভিতে আজকের কোন খেলা কোথায় দেখবেন
- আশুলিয়ায় মরদেহ পোড়ানোসহ সাত হত্যায় আজ সাক্ষ্যগ্রহণের ১৮তম দিন
- গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের পাশের মার্কেটে আগুন
- রাজধানী ঢাকায় আজ কোথায় কোন কর্মসূচি
- পরিচয় গোপন করে চ্যাটের সুবিধা আনছে হোয়াটসঅ্যাপে
- ঢাকার বাতাস আজ কতটা বিষাক্ত?
- ট্রুডো–কেটি পেরি'র প্রেম নিয়ে সাবেক স্ত্রী সোফির খোলামেলা মন্তব্য
- মুশফিকের শততম টেস্ট উদযাপনে যেসব আয়োজন করেছে বিসিবি
- হামজাদের জন্য দুই কোটি টাকা বোনাস ঘোষণা করলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা
মালয়েশিয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা
মাহমুদ আজহার, মালয়েশিয়া থেকে ফিরে
প্রিন্ট ভার্সন
টপিক
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বশেষ খবর