রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা

চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

মোস্তফা মতিহার

চারুকলায় মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

চৈত্রের এখন মধ্য বয়স। বাঙালির দুয়ারে কড়া নাড়ছে বৈশাখ। পুরনো বছরের সব গ্লানি ও জরাজীর্ণতা মুছে ফেলে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬-এ নতুন দিনের পথে এগিয়ে যাবে গোটা জাতি। ‘মুছে যাক গ্লানি ঘুছে যাক জরা, অগ্নিস্নানে সুচি হোক ধরা’ রবি ঠাকুরের কবিতার পঙ্ক্তিকে উপজীব্য করে আর কয়েকদিন পরেই ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে মেতে উঠবে সারা দেশ। রাজধানীতেও ছড়িয়ে পড়বে উৎসবের রং। সেই রঙে ছড়ানো থাকবে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন। বৈশাখ উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সফল ও আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। চারুকলা অনুষদের সীমানা প্রাচীর পেরিয়ে সামনে এগোলেই দেখা মিলবে ব্যস্ততার যত ফিরিস্তি। টেবিলের ওপর ছড়িয়ে রয়েছে রং আর কাগজ। মুখোশ, পুতুল, মাটির সরা, মাটির ব্যাংক, টেপাপুতুল, পাখি, হাতপাখাসহ নানা উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত চারুকলার শিক্ষার্থীরা। জয়নুল আর্ট গ্যালারির সম্মুখভাগ পেরিয়ে বকুলতলার দিকে এগোলে দেখা মিলবে শিল্পকর্মের কাঠামো তৈরিতে ব্যস্ত একদল শিক্ষার্থী। বৈশাখ প্রায় সমাগত বলে শিক্ষার্থী শিল্পীদের দম ফেলারও যেন ফুরসত নেই। গতকাল সরেজমিন চারুকলা অনুষদে গিয়ে এ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। গত ১৯ মার্চ বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে এ কর্মযজ্ঞে সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক শিল্পী দিনরাত কাজ করছেন। শোভাযাত্রার এবারের কাজের দায়িত্বে রয়েছেন চারুকলার ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। নিজস্বতা ও স্বকীয়তাকে বজায় রাখতে বরাবরের মতো নিজস্ব অর্থায়নেই শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন চারুকলার শিক্ষার্থীরা। বাংলা সংস্কৃতির শৈল্পিক উপস্থাপনায় নিজেদের তৈরি শিল্পকর্ম ও চিত্রকর্ম বিক্রি করেই তারা তহবিল গঠন করছেন। অন্যদিকে সহপাঠীদের তৈরি এসব শিল্পকর্ম ও চিত্রকর্ম বিক্রি করে মঙ্গল শোভাযাত্রায় ফান্ড তৈরিতে এসবের বিক্রিতে ব্যস্ত আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শৈল্পিক ও সৃজণশীল এ অনুষদের অন্য শিক্ষার্থীরা। একদিকে তৈরি হচ্ছে অন্যদিকে বিক্রি হচ্ছে। মোট কথা ঘামে ও শ্রমেই তৈরি হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রার তহবিল। অনুষদের শিক্ষার্থীরা জানান, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার পুরোভাগে থাকবে মহিষ, পাখি ও ছানা, হাতি, মাছ ও বক, জাল ও জেলে, টেপা পুতুল, মা ও শিশু এবং গরুর আটটি শিল্পকাঠামো। এ ছাড়াও রয়েছে পেইন্টিং, মাটির তৈরি সরা, মুখোশ, রাজা-রানীর মুখোশ, সূর্য, ভট, লকেট ইত্যাদি। কাঠামো তৈরি শেষ হলে তাতে কাগজ জুড়ে রং দেওয়ার কাজ শুরু করা হবে।

 ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হলেও নিউজিল্যান্ডে জঙ্গি হামলা ও বনানীর অগ্নিকান্ডে র কারণে প্রতিপাদ্য পরিবর্তন হতে পারে বলেও জানিয়েছেন শোভাযাত্রার প্রস্তুতির কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

এবার সিনিয়র শিল্পীদের পেইন্টিং বিক্রি  হচ্ছে ৪-৫ হাজার টাকা এবং জুনিয়রদের ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা। মাটির তৈরি সরা বিক্রি হচ্ছে ৫০০-১০০০ টাকা, রাজা-রানীর মুখোশ (ম্যাশ) বড় (জোড়া) ৩০ হাজার, ছোট ১৫ হাজার, কাগজের মুখোশ ৫০০-১০০০ টাকা, মঙ্গল প্রদ্বীপ ১৫শ টাকা, পাখি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, লকেট ১০০-১৫০ টাকা, ভট জোড়া ১০০-২০০ টাকা, মাটির তৈরি সূর্য ১৫ হাজার টাকা।

সর্বশেষ খবর