ঝিনাইদহ জেলা সদরসহ উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। দিন দিন রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেলেও ডাক্তারের শূন্য পদে কোনো নিয়োগ নেই। ফলে গরিব ও অসহায় রোগীরা কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অফিস সময় হলেও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের বেশির ভাগ চিকিৎসক যথাসময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত হন না। অনেক সময় দুপুরের আজান হলেই চিকিৎসকরা প্রাইভেট প্র্যাকটিস করার জন্য ক্লিনিকে নতুবা বাড়ির পথ ধরেন। এ ছাড়া হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রাতের বেলা রাউন্ড দেওয়ার বিধান থাকলেও মেডিসিন, সার্জারি ও হৃদরোগের চিকিৎসকরা রাউন্ড দেন না। ফলে বেশির ভাগ জটিল রোগী রেফার্ড করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় ডাক্তার সংকটের অজুহাতে হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে পছন্দের ক্লিনিকে। অন্যদিকে শৈলকুপাসহ প্রায় সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম ওষুধ সংকট রয়েছে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় ২১১ ডাক্তারের পদে মাত্র ৬৩ জন কর্মরত আছেন। শূন্য পদ আছে ১৪৮টি। ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সহকারী সার্জনের ২০টি পদে কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন। ১৩টি পদ শূন্য। এ ছাড়া সিভিল সার্জন অফিসে ১ জন, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ৪০ জন ডাক্তারের মধ্যে ১৭ জন, কালীগঞ্জ হাসপাতালে ৩১ জন ডাক্তারের মধ্যে ৭ জন, মহেশপুর ৩৪ জন ডাক্তারের মধ্যে মাত্র ৪ জন, শৈলকুপায় ২৬ জনের মধ্যে ৭ জন, হরিণাকু ুতে ৩০ জনের মধ্যে ৫ জন ও কোটচাঁদপুরে ২৬ জন ডাক্তারের মধ্যে ৮ জন কর্মরত আছেন। বছরের পর বছর এসব শূন্য পদে কোনো চিকিৎসক পদায়ন করা হয় না। ফলে স্বল্পসংখ্যক ডাক্তার দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসকদের প্রায়ই বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে। হয় আদালত ও থানায় মামলা। তবে রোগীদের অভিযোগ, অনেক সময় রোগীদের ভালো মানের ওষুধ থাকলেও দেওয়া হয় না। জানা গেছে, প্রতিদিন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ১ হাজারের বেশি রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক বেডের বিপরীতে অসংখ্য রোগী ভর্তি হয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নেন। জেলার মহেশপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা রোগীদের ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয় না। একই অবস্থা ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ করে ঠিকাদাররা এ কাজ করে থাকেন। আরও জানা গেছে, অনিয়মের শেষ নেই ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে। ভর্তি হওয়া রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা পান না। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও উন্নত পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ না পেয়ে রোগীরা দৌড়ান প্রাইভেট ক্লিনিকে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে অক্সিজেন বিভাগে কোনো টেকনিশিয়ান নেই। ফলে কোটি টাকার বেশি এই প্রকল্প প্রায় অচল হতে বসেছে। অনেক বিভাগে এক্সপার্ট না থাকার কারণে মেশিনপত্র পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ডাক্তাররা কোনো পিয়নও পান না। এক গ্লাস পানি খেতে হলেও নিজের খেতে হয়। অনেক সময় ডাক্তারের অভাবে উপজেলা পর্যায়ে অপারেশন সম্ভব হয়ে ওঠে না। এদিকে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন। ভর্তি থাকেন ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী। এই বিপুলসংখ্যক রোগী ৪/৫ জন ডাক্তারকে সামাল দিতে হচ্ছে। হরিণাকুন্ডু হাসপাতালে ৩০ জন ডাক্তারের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। দুজন ডাক্তার রাতের ডিউটি করে বিশ্রামে গেলে বাকি তিনজন ডাক্তার সামলান দিনের বেলা। এভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে জেলার চিকিৎসাসেবা। এসব বিষয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা সুলতানা জানান, আমরা একাধিকবার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে শূন্য পদ পূরণের কথা বলেছি। কিন্তু পদ পূরণ হয় না। ফলে কর্মরত চিকিৎসকরা ফুরসত পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, তারপরও এত কম চিকিৎসক দিয়ে আমরা রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি।