মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা
ইকোনমিক ও প্রশাসন ক্যাডার একীভূতকরণ

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এক বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি

নিজামুল হক বিপুল

বিসিএস (ইকোনমিক) ও বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার একীভূতকরণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রায় এক বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। এই দুই ক্যাডারের একীভূতকরণ কেবল ঘোষণাতে সীমাবদ্ধ। যদিও এরই মধ্যে ইকোনমিক ক্যাডার বিলুপ্ত করা হয়েছে। তবে তাদের প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত করে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা তা এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের ৪৬৫ কর্মকর্তা। প্রশাসন ক্যাডারের নিচের দিকের বিভিন্ন ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হলেও ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা এখনো আগের পদেই বহাল রয়েছেন। এ কারণে তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং দুই ক্যাডার একীভূত হওয়া সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার সারসংক্ষেপসহ অন্যান্য নথিপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারকে একীভূতকরণে একটি সারসংক্ষেপ অনুমোদন দেন। ওই সারসংক্ষেপেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে উভয় ক্যাডার একীভূতকরণের ক্ষেত্রে যে বাধা বিপত্তি রয়েছে সেগুলো দূর করে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য। এতে উল্লেখ করা হয়েছিল, একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অন্যতম ধাপ- অর্থাৎ জারিকৃত এস আরও অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুলাই মাসের মধ্যে একীভূত কার্যক্রম সম্পন্ন করা। একই সময়ের মধ্যে প্রাক্তন বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডার কর্মকর্তাদের ২৫ ব্যাচ পর্যন্ত প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম-সচিব, উপ-সচিব পদে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা এবং বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৭তম ব্যাচের সঙ্গে ইকোনমিক ক্যাডারের ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়টি বিবেচনা করা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই ক্যাডার একীভূতকরণ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর সারসংক্ষেপ অনুমোদনের পর গত বছরের ১৩ নভেম্বর এস আরও (নং-৩৩৫-আইন) জারি হয়। ওই এস আরও জারির পর থেকে ইকোনমিক ক্যাডারের কোনো অস্থিত্ব নেই। ওই এস আরও তে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) এবং বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ইকোনমিক) ক্যাডারের সব পদ ও জনবল বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারের পদ ও জনবল হবে। বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সমন্বিত মেধা তালিকা অনুসারে পুলে যোগদানকারী বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ইকোনমিক) ক্যাডারের কর্মকর্তাগণের জ্যেষ্ঠতা স্ব স্ব ব্যাচের বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তাগণের সঙ্গে নির্ধারিত হবে। সরকার কর্তৃক এ সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী একীভূত বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ইকোনমিক) ক্যাডারের কর্মকর্তাগণের সমপদে পদায়ন, জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ এবং একীভূতকরণের সব প্রক্রিয়া পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে বেশ ঢিমেতালে কাজ করছিল। প্রথমে এ সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনেই প্রায় তিন মাসের বেশি সময় নেয়। এরপর কয়েক দফা কমিটির সভাপতিও পরিবর্তন হয়। শেষ পর্যন্ত ওই কমিটি গত মে মাসে একটি প্রতিবেদন জমা দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে।  এটির সারসংক্ষেপ অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু জারিকৃত এস আর ও এর সঙ্গে কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ের ব্যত্যয় ঘটায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান প্রতিবেদনটি নিরীক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-১ কে নির্দেশনা দেন। এরপর থেকে এ নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি নেই। বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের পরিচয় সংকটে রয়েছেন। প্রশাসন ক্যাডারের ১৫ ও ১৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম-সচিব হয়েছেন। কিন্তু একই ব্যাচের বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা এখন একই পদে (উপ-প্রধান) দায়িত্ব পালন করছেন। একইভাবে প্রশাসন ক্যাডারের ২০ থেকে ২৫ ব্যাচের কর্মকর্তারা উপ-সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু একই ব্যাচের বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা স্বপদেই বহাল আছেন। এ নিয়ে ক্রমেই জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর