শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নির্যাতনের শিকার সেই সুমী ফিরলেন বাবা-মার কাছে

নিজস্ব প্রতিবেদক ও পঞ্চগড় প্রতিনিধি

নির্যাতনের শিকার সেই সুমী ফিরলেন বাবা-মার কাছে

দেশে ফিরেছেন মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত নারী গৃহকর্মী সুমি আক্তার। কিছু দিন আগে সৌদি আরব থেকে জীবন বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে সুমির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপর সুমিকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জোর দাবি ওঠে। অবশেষে গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় এয়ার এরাবিয়ার জি৯-৫১৭ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান সুমি। তবে গতকাল সুমি একা দেশে ফেরেননি, তার সঙ্গে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন নির্যাতিত আরও ৯১ নারী গৃহকর্মী।

গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় সুমিকে পঞ্চগড়ে তার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহমুদ হাসান। এ সময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন পাঁচপীর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির। সকালে বিমানবন্দরে সুমিকে গ্রহণ করেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক জহিরুল ইসলাম। কিন্তু এ সময় সুমিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপ-সহকারী পরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল সুমিকে নিয়ে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা হন। যদিও আগে থেকে বিমানবন্দরে সুমির জন্য তার স্বামী নূরুল ইসলাম অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি সুমির স্বামী। পরে দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আলাদা গাড়িতে নূরুল ইসলামও পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা দেন।  মেয়েকে ফিরে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন সুমির মা মলিকা বেগম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অনেক দিন পর মেয়েকে দেখে শান্তি লাগছে। আমি এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে মলিকা বেগম মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সুমির বাড়ি পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার পাঁচপীর ইউনিয়নের বৈরাতী সেনপাড়া গ্রামে। তার বাবা রফিকুল ইসলাম পেশায় একজন দিনমজুর। চার ভাই-বোনের মধ্যে সুমি বড়। দুই বছর আগে আশুলিয়ার চারবাগের নূরুল ইসলামের সঙ্গে সুমির বিয়ে হয়। সম্প্রতি ফেসবুকে আপলোড করা এক ভিডিওতে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুমি তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানান। এরপর সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সুমিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) সিরাজুল ইসলামকে নির্দেশ দেন। এরপর গত ৪ নভেম্বর রাতে সৌদি আরবের জেদ্দার দক্ষিণ-দক্ষিণে নাজরান এলাকার কর্মস্থল থেকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পুলিশের তত্ত্বাবধানে নাজরান শহরের একটি সেইফ হোমে ছিলেন সুমি। এরপর ৫ নভেম্বর জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল থেকে দেওয়া এক চিঠিতে সুমি আক্তারকে দেশে ফেরাতে ট্রাভেল এজেন্সি ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’কে ২২ হাজার রিয়াল (প্রায় পাঁচ লাখ টাকা) ও প্লেনের টিকিট দেওয়ার প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়।

 পরে নাজরান শহরের শরম আদালতে সুমিকে দেশে ফেরার ‘ফাইনাল এক্সিট’ দেয়। শেষ পর্যন্ত গতকাল সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফেরেন সুমি।

সর্বশেষ খবর