রাজধানী ঢাকায় মাথার ওপর খুঁটিতে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তার, ইন্টারনেট ও ডিস ক্যাবলের তারের জঞ্জাল সরাতে সরকার দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে। গত এক দশক ধরে এজন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়। যদিও বেশ কিছু এলাকায় এরই মধ্যে বিদ্যুতের তার মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তবে ক্যাবল টিভি ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ায় এসব সেবা সংস্থার তারের জঞ্জাল এখনো মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। অথচ তারের জঞ্জাল সরাতে উচ্চ আদালত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্দেশ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহেই এ বিষয়ে ক্যাবল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আর নতুন বছর থেকে রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তারের জঞ্জাল পাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবার কাজ শুরু করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এরই মধ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সিলেটে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যক্রম চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সিলেট নগরের টেলিফোন, ইন্টারনেট, ক্যাবল লাইনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সব তার ভূগর্ভে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়াও পর্যায়ক্রমে ঢাকা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও কেরানীগঞ্জসহ দেশের অন্যান্য শহরে মাথার ওপর ঝুলে থাকা তার মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি আরও জানান, শিগগিরই ক্যাবল অপারেটর ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠকে বসবেন এবং তাদের এ ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। এরপরও যদি তারা কথা না শোনেন সেক্ষেত্রে সরকার ঝুলন্ত তার অপসারণের ক্ষেত্রে আর কোনো ছাড় দেবে না। জানা যায়, বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) এরই মধ্যে ঢাকার ধানমন্ডি ও গুলশান এলাকার ঝুলন্ত তার মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। রাজধানীর কোন কোন এলাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবলিং করা যায় তার জন্য প্রতিবেদন দিতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্টদের একটি প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় গত বছরের অক্টোবরে। তার সরানোর জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে এরই মধ্যে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। জানা যায়, ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ মাটির নিচে এক হাজার ৫০০ কিমি. বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন নির্মাণ করার নকশা তৈরি করেছে। বর্তমানে ডেসকো গুলশান, বনানী ও মিরপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ৩৩৮ কিমি. বৈদ্যুতিক লাইন মাটির নিচে। আর ডিপিডিসির সরবরাহকৃত বিদ্যুতের মধ্যে উলন থেকে ধানমন্ডির পরীবাগ পর্যন্ত ১৩২/৩৩ কেভি একটি বৈদ্যুতিক লাইন মাটির নিচে। ডিপিডিসির পরিকল্পনা রয়েছে তারা ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরের বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে মাটির নিচে ক্যাবল লাইন নিয়ে যাবে। আর ডেসকো কর্তৃপক্ষ ঢাকার অভিজাত এলাকা খুঁটি ও তারমুক্ত করার জন্য কাজ করছে। এ ছাড়া পূর্বাচলেও মাটির নিচে বিদ্যুতের লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। উত্তরা ও বারিধারা অংশের জন্যও প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়। আবার হাতিরঝিলেরও বিতরণ লাইন ভূগর্ভস্থ লাইনে রূপান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রিগে. জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. শহীদ সারওয়ার বলেন, বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় ডেসকোর ১৩২ কেভি বৈদ্যুতিক লাইন এরই মধ্যে মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু ক্যাবল অপারেটর ও ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবেই বিদ্যুতের খুঁটি ব্যবহার করে তাদের তার ঝুলিয়ে রেখেছেন। তারা এ ব্যাপারে আমাদের সহযোগিতা করছেন না। আমরা বিভিন্ন সময় এই অবৈধ তার কেটে দিলেও তারা আবার লাইন লাগিয়ে দিচ্ছেন। ঢাকার বিদ্যুতের খুঁটি থেকে তারের জঞ্জাল সরাতে চীনের অর্থায়নে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ডিপিডিসি। ২০২৫ সালের মধ্যে রাজধানীর সব এলাকার বিদ্যুতের তার মাটির নিচে চলে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। তবে তারের জঞ্জাল থেকে ঢাকাকে মুক্ত করতে ২০০৯ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শাহবাগ থেকে উত্তরা পর্যন্ত সড়কের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে অন্য সব সেবার তার সরানোর কাজ শুরু হয়েছিল তখনই। কিন্তু সে সময় খুব সামান্য পরিমাণ তার অপসারণ করা হয়েছিল।