ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) উদ্ভাবিত শিং মাছের নতুন পদ্ধতির চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন একাধিক কৃষক। নতুন এ চাষ পদ্ধতির নামকরণ করা হয়েছে ‘শিং মাছের নিবিড় চাষ’। বিএফআরআই সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সুহিলা ও মাঝিহাটি গ্রামের দুজন চাষি এ পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, নান্দাইল, হালুয়াঘাট, ভালুকা, শেরপুরের নকলা এবং নোয়াখালীর চাটখিলের মৎস্যচাষিরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিং মাছের নিবিড় চাষাবাদ শুরু করেছেন। বিএফআরআই আরও জানায়, সাধারণত মৎস্যচাষিরা আধানিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করে থাকেন। চাষের এ নিবিড় পদ্ধতিতে একজন চাষি একটি পুকুরে শুধু শিং মাছই চাষ করবেন। একই পুকুরে শিং মাছের সঙ্গে অন্য কোনো মাছ চাষ করতে পারবেন না। এ পদ্ধতিতে শুধু স্ত্রীজাতীয় শিং চাষ করলেই ব্যাপক সাফল্য আসে। চাষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিএফআরআইর পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়। ছোট পরিসরের পুকুরে মাত্র ছয় মাসে এ চাষ সম্পন্ন হয়।
ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এইচ এম কোহিনুর বলেন, এ পদ্ধতিতে শিং মাছের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, পুকুরকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা। কোনোভাবেই যেন পুকুরের পানি নষ্ট না হয়, সেটি খেয়াল রাখতে হবে। পুকুরে চার-পাঁচ দিন পর পর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা খুবই জরুরি। তাহলেই বড় সাফল্যের দেখা পেতে পারেন চাষিরা। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সুহিলা গ্রামের আবু রায়হান ও মাঝিহাটি গ্রামের দুলাল ব্যাপারী এ পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। আবু রায়হান মাত্র ২০ শতকের পুকুরে এ পদ্ধতিতে চাষ করেন। এতে তার ব্যয় হয় সাড়ে ছয় লাখ টাকা। ছয় মাস পর তিনি পুকুরের মাছ বিক্রি করেন প্রায় ১৫ লাখ টাকায়। আর মাঝিহাটি গ্রামের চাষি দুলাল ব্যাপারী এ পদ্ধতি অনুসরণ করে ৩২ শতকের পুকুরে শিং মাছ চাষ করেন। তিনিও ব্যাপক লাভবান হন। আবু রায়হান বলেন, ‘বিএফআরআইর পরামর্শে নিবিড় চাষ করে সফলতা পেয়েছি। বিজ্ঞানীদের পরামর্শ নেওয়ায় চাষকালে কখনো মাছের কোনো রোগ হয়নি। এটিই সফলতার বড় কারণ।’ এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে নিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করা হলে মৎস্য খাতে এক নতুন মাত্রা সংযোজিত হবে। এখন এ প্রযুক্তি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি জানান, বাংলাদেশে শিং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। এ মাছে ফ্যাটের পরিমাণ কম এবং প্রচুর পরিমাণে উচ্চমানের সহজপাচ্য আমিষ থাকায় সবার কাছে এর চাহিদা রয়েছে। রুইজাতীয় মাছের চেয়ে এদের বাজারমূল্য অনেক বেশি।